চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স, অংশ নিচ্ছেন ৫ শতাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কার্ডিওভাসকুলার কনফারেন্স। আগামী ১৬ এবং ১৭ জুন পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু এর মোহনা হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক এ বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, নেপালসহ দেশ বিদেশের পাঁচ শতাধিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ প্রায় ৭০০ জন অংশগ্রহণ করবেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা এ সম্মেলনে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, করণীয়, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালিত হবে। সম্মেলনে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতের দিল্লি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ক্যাথল্যাব থেকে জটিল গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগ ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা পদ্ধতি দেখানো হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ইসমাইল খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো শামীম আহসান। বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটির সভাপতি ডা. এ কে এম মহিবুল্লাহ , সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল সাদি মজুমদার, বাংলাদেশ সোসাইটি অব কার্ডিওভাস্কুলার ইন্টারভেনশের সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ডা. মীর জামাল উদ্দিন, বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।

বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ডা. সন্ধীপ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল হার্ট অ্যাটাকের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। পাশাপাশি বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তুলনামূলক চিত্র নিরূপণ করা ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের বিষয়টি আলোচনা করা হবে। এছাড়াও সম্মেলনে ২৬ টি সেশনে ৫১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।

আলোচনায় চট্টগ্রামের হৃদরোগের বাস্তবতা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আহবায়ক ও বাংলাদেশ হাইপারটেনশন এবং হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা প্রবীর কুমার দাশ।

বাংলাদেশ হাইপারটেনশন এবং হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল হোসেন শাহীনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে রাখেন চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও চট্টগ্রাম সোসাইটি অব ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সভাপতি ডা. আশিষ দে, সাবধারণ সম্পাদক ডা. আনিসুল আউয়াল, ডা. রেজোয়ান রেহান, ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন ডা. ইব্রাহিম চৌধুরী, ডা. সালেহ উদ্দিন সিদ্দিকি উজ্জ্বল, ডা. নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, ডা. সাগর চৌধুরী, ডা. রাজিব দে, ডা. বিধান রায় প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগই এখানে সরকারী টারশিয়ারী পর্যায়ের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র। তার উপর নির্ভর করে এতদ অঞ্চলের প্রায় ৪ কোটি জনগোষ্ঠী। তুলনামূলকভাবে রাজধানী ঢাকায় সরকারী পর্যায়ের জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউটসহ মোট ৭টি বিশেষায়িত হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। বাণিজ্যিক রাজধানী তকমা পাওয়া চট্টগ্রামে নেই কোন বিশেষায়িত সরকারী হৃদরোগ হাসপাতাল। তা থাকলে এখানে স্বল্প ব্যয়ে আধুনিক হৃদরোগ সেবা আরো বিকশিত হতো। গরীব ও আর্থিকভাবে অসচ্চল হৃদরোগী স্বল্প মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে ষ্টেন্ট, পেসমেকার, হার্টের ভাল্ব ও অন্যান্য পরিষেবা গ্রহণে সক্ষম হতো, যা ঢাকাস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সষ্টিটিউটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের হত দরিদ্র রোগীরা এ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। একইভাবে চট্টগ্রামে সরকারী পর্যায়ে একমাত্র ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। এত বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসার জন্য তা নিতান্ত অপ্রতুল। অবশ্য ইতিমধ্যে এখানে বেসরকারী পর্যায়ে আরো ৬টি ক্যাথল্যাব স্থাপিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের হৃদরোগীদের ঢাকা কিংবা বিদেশ গমন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আর তা সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে কোনভাবে যথেষ্ট নয়।

চট্টগ্রামে হৃদরোগ ও তার চিকিৎসার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কার্ডিকন চট্টগ্রাম-২০২৩। ১৬-১৭ জুন দুইদিন দেশী বিদেশী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও এক্সপাটগণ হৃদরোগের বিভিন্ন দিক, তার ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা, শল্য চিকিৎসা ও হৃদরোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন দিক নিয়ে এই আন্তজার্তিক কনফারেন্সে তাদের গবেষণাকর্মও অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করবেন। বিদেশী ইন্টারভেনশনাল এক্সপার্টগণ তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবেন। এতে সমৃদ্ধ হবে অংশগ্রহনকারীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। যা চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের হৃদরোগের চিকিৎসা, গবেষণা ও প্রতিরোধে সূদুর প্রসারী প্রভাব ফেলবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।