চবিতে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা ভিসি বাংলোয়! মুখোমুখি উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগ ও আইন বিভাগের বিতর্কিত শিক্ষক নিয়োগ-বোর্ড নিয়ে প্রত্যক্ষ দন্দ্বে জড়িয়েছেন উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দিনভর এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক আইন বিভাগ ও বাংলা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে চিঠি দিতে উপাচার্য কার্যালয়ে গেলে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে চরম বাক বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় উপাচার্যের উপস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী চিঠি পাঠ করার এক পর্যায়ে উপাচার্য উত্তেজিত হয়ে পড়েন। উপাচার্যপন্থি ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা বাকবিতন্ডায় জড়ান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য দপ্তরে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় প্রশাসনপন্থি শিক্ষকরা কয়েক দফায় উপাচার্য দপ্তরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বাইরে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রশাসনপন্থি এসব শিক্ষকরা প্রশাসন মনোনীত বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ঘটনার পর শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক দুপুর ২টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা উপাচার্য দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
পরে সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে কর্মসূচি ঘোষণা করে চবি শিক্ষক সমিতি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদত্যাগের একদফা দাবিতে সোমবার সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই ঘণ্টা অবস্থান নিবেন শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য সবার অগোচরে নিজের বাংলোতে নিয়োগ প্রার্থীদের ভাইবা নিয়েছেন জানিয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, কাউকে কিছু না জানিয়ে বাংলোতে গিয়ে ভাইভা নেওয়াটা নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগেও আমরা বিভিন্ন যৌক্তিক দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছি। তবে প্রশাসন সেদিকে কর্ণপাত করেনি। অন্যায়কে বাস্তবায়ন করার জন্য আজ যে গর্হিত কাজ উপাচার্য করেছে তা আইনের পরিপন্থি। এই ঘটনায় উপ-উপাচার্যেরও দায় আছে বলে মনে করি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, আমরা উপাচার্যকে বোঝানোর জন্য গেলে তিনি কথা পর্যন্ত বলেননি। একপর্যায়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

আইন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান বলেন, সিলেকশন বোর্ডের মেম্বার ও প্রার্থীকে একই গাড়িতে করে উপাচার্য দপ্তর ত্যাগ করতে দেখা গেছে যা আইন বহির্ভূত। প্রার্থীর সাথে বোর্ড মেম্বারদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। যদি থাকে, তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবা নবী বলেন, অবৈধ বাধার মুখে পড়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের পরিবর্তে ভিসি বাংলোতে উপস্থিত মোট ৮ জন প্রার্থীর ভাইভা নিয়েছি। এই নিয়োগে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। পরিকল্পনা কমিটি পরপর তিনবার শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ না করলে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপাচার্য নির্বাহী ক্ষমতায় নিয়োগ দিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আইন বিভাগের ক্লাসলোড রয়েছে। মাস্টার্সের সাতটা কোর্স আমরা শিক্ষকের অভাবে চালু করতে পারছি না। এছাড়া আউটকাম বেজড এডুকেশনে ক্লাসলোড বেশিই হবে। আরও কিছু কোর্স আমাদের চালু করতে হবে। তারা তর্কের খাতিরে তর্ক করছেন। তারা ভিসি অফিস ঘেরাও করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন যা নজিরবিহীন ঘটনা।

প্রার্থী ও বোর্ড সদস্যদের একই গাড়িতে দপ্তর ত্যাগ করার বিষয়কে তিনি বলেন, উপাচার্য তার গাড়িতে করে গেছেন। আমরা আলাদাভাবে গেছি। আমাদের সাথে কোনো প্রার্থী ছিলেন না।

এছাড়া, বোর্ডে উপস্থিত অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনোরূপ সাড়া দেননি।

এদিকে, আগামীকাল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলা বিভাগের অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ-বোর্ড থেকে চার সদস্যের মধ্যে দুইজন অংশ নিবেন না জানিয়ে উপাচার্য বরাবর এক চিঠি দিয়েছেন। এ দুইজন হলেন, বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মহিবুল আজিজ। পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করার কারণে তাঁরা নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকবেন না বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।