চবির ৩, চুয়েটের একজনসহ দেশে ১০১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণা তথ্য

গত বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহননের পেছনে পারিবারিক সমস্যা, হতাশা, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা ও আর্থিক সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি কারণ ওঠে এসেছে অনুসন্ধানে।

সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ৭৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০১৯ সাল থেকে আঁচল ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারা অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য যাচাই করে আত্মহত্যা বিষয়ক তথ্য পেয়েছে বলে জানা গেছে।

১০১ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল শিক্ষার্থী ১২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ফাউন্ডেশনটি। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা; হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক এ সমীক্ষা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশন সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত বছর আত্মহননে সর্বোচ্চ সংখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ৯ জন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আঁচলের গবেষণায় বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১৮-২১ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৭ জন, ২৬-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০ জন এবং ২৯ ঊর্ধ্ব ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন।

শ্রেণিভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

আঁচলের সমীক্ষায় উঠে আসছে, প্রেমঘটিত সমস্যায় ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার করেছেন। পারিবারিক সমস্যায় ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর্থিক সমস্যার কারণে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিজিৎ হিরা আত্মহত্যা করেন ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১। ২০১৯ সালে তিনি পিএইচডি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মারকিউট বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তিনি। গবেষণায় ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক ও এনক্রিপশন টেকনোলজি নিয়ে ইতোমধ্যেই ১২টি পাবলিকেশন সম্পন্ন করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এক বছরে এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ার খবর ভীতিকর। তার মতোই ভীতিকর হলো বিষয়টি নিয়ে কেউ কিছু ভাবছে না। অথচ আমাদের দেশে প্রতিবছর আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।’

প্রতিটি জেলা, উপজেলা পর্যায়ে মানসিক সেবা নিশ্চিতে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে মানসিক চিকিৎসা সেবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার মর্যাদা দেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।