চবি ছাত্রলীগের সংঘর্ষে প্রক্টর-পুলিশসহ আহত ২৫, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে লাগাতার সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপ সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। এতে প্রক্টর-পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। টানা কয়েক ঘন্টা সংঘর্রে পর বেসামাল হয়ে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে র‌্যাব।

আগের দিন রাতের সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়ায় তারা। আহতদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জানা গেছে, বুধবার (৩১ মে) রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে দুই পক্ষের দুই কর্মীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় সিএফসির কর্মীরা শাহ আমানত হল ও সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবাস্থান নেন। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন চবি পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান। প্রায় দেড় ঘন্টা সংঘর্ষের পর রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।

এর জেরেই বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় সিএফসির অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক রমজান হোসাইন নামে একজনকে কুপিয়ে জখম করে সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা।

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজীম শিকদারও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় প্রক্টর পুলিশের সামনেই উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের রামদা, কিরিচ, রড, লাঠিসোঁটাসহ নানা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেয়ে যান প্রক্টরিয়াল বডিও। পরবর্তীতে র‍্যাব ও পুলিশের বিশেষ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরাই একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সিএফসি গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, গতকাল সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু আজকে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ছেলেদের ওপর হামলা চালায়।

অপরদিকে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের উপ-কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল মুকুল বলেন, গতকালের ঘটনার পর সবকিছু ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে যখন আমাদের ছেলেরা হল থেক বের হয় তখন সিএফসির নেতাকর্মীরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এসব বিষয়ে প্রক্টর নূরুল আজীম শিকদার বলেন, পুলিশ ও র‍্যাবের সহায়তায় আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত করতে সক্ষম হয়েছি। প্রত্যেককে নিজ নিজ হলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৪ জুন চবিতে আসবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে তার। আর তার আগমনের আগে হুট করে ক্যাম্পাসে এভাবে মারামারি নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।