চবি প্রশাসনের অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির ২৬ দাবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে এবং শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ২৬ দফা দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি।

রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য কৌশলে উপেক্ষা করে এসেছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এসব দাবি বাস্তবায়ন না করায় আমরা বাধ্য হয়ে হয়েছি দেশের এই নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই কর্মসূচি দিতে। প্রশাসন বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ৭৩’ এর আইনকে অমান্য করেছে। তিনি সিন্ডিকেটকে একটি পর্ষদে পরিণত করেছে ফেলেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারসাম্যহীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৭৩’ এর আইনকে অমান্য করেছেন।

সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আমাদের প্রতিটি দাবি প্রশাসন কৌশলে উপেক্ষা করে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতিকে প্রোগ্রামের আগেরদিন দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। অথচ অনুষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ খুবই নগন্য। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রুটি-রুজির উচিলা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ জড়িয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। কিন্তু প্রশাসন এই দিবস উদযাপনের আগে থেকে শিক্ষক সমিতিকে কোনো কিছু জানায়নি। এভাবেই প্রতিনিয়ত শিক্ষক সমিতিকে অমর্যাদা করছে। তিনি আসলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন। উনার নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে গেছে। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের মতো একটি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং নেতৃত্বের দুর্বলতা থাকায় শিক্ষকগণ তার সাথে অংশগ্রহণ করতে চান না।

দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

১. অতিসত্বর সিন্ডিকেটে ডিন, প্রভোস্ট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিতে হবে।

২. শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে নিয়োগ-বাণিজ্য চক্রের সাথে যুক্তদের খুঁজে বের করতে হবে।

৩. শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ইনস্টিটিউট এর সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন অনেক প্রশাসন-ঘনিষ্ট শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী বোর্ড পুনর্গঠন করতে হবে।

৪. পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত এ সকল নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন বিভাগে স্থায়ী/অস্থায়ী ভিত্তিতে গণহারে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে এবং সকল অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

৫ সিন্ডিকেট সভায় ‘নির্বাচনী বোর্ড বা সিন্ডিকেট প্রযোজন মনে করলে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ দিতে পারবে’ মর্মে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিপন্থী ও বেআইনি সিদ্ধান্ত অতিসত্বর বাতিল করতে হবে।

৬. সিন্ডিকেট সভায় বিভাগ থেকে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এ সকল প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপককে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই স্থায়ী করা যাবে’ মর্মে গৃহীত বেআইনি এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্ট পরিপন্থী সিদ্ধান্ত অতিসত্বর বাতিল করতে হবে।

৭. নির্বাচনী বোর্ড বা বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সদস্য হিসেবে মিথ্যার আশ্রয়গ্রহণ, স্বীকৃত ও মানসম্পন্ন জার্নালের প্রকাশনাকে অস্বীকার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষকগণের পদোন্নতিতে অন্যায়ভাবে বাধা সৃষ্টিকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং অতিসত্বর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়ে আবেদনের তারিখ থেকে কার্যকর করতে হবে।

৮. পালি বিভাগের সভাপতি জনাব শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আবদুল হক এর বিরুদ্ধে গঠিত হয়রানিমূলক তদন্ত কমিটি অতিসত্বর বাতিল করতে হবে।

৯. শিক্ষকদের যাতায়াত সংকট নিরসনের জন্য অতিসত্বর নতুন শিক্ষক বাস (এসি) ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১০. অবিলম্বে আবাসিক হলসমূহে নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ প্রদানসহ আবাসনের পরিবেশ ও খাবারের মান বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১১. অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের জন্য শাটল ট্রেনে বগির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর শুরুতে ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ব্যাপক ভাংচুর ও সম্পদহানির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

১২. অবিলম্বে যে কোন ইস্যুতে যখন-তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া; শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে হুমকি প্রদান কিংবা মারধর: এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানি সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার মত নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডসমূহ মোকাবেলায় দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

১৩. একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন বিধিবদ্ধ পর্ষদের সভায় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ কিংবা প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সম্মানিত শিক্ষকগণের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে এবং এ সকল কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্তদের দ্রুত জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

১৪. উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত শর্তসমূহকে শিথিল করার প্রস্তাব এবং তা সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

১৫. সিন্ডিকেট এর বিভিন্ন সভার আলোচ্যসূচি যথাসময়ে সদস্যগণের নিকট প্রদান না করা, সভাসমূহে গৃহীত সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সভা অনুষ্ঠানের তারিখের পর বিকৃত করা এবং যথাসময়ে সিন্ডিকেট সদস্যগণের নিকট কার্যবিবরণী সরবরাহ না করার মত অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি কার্যক্রম থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে।

১৬. বর্তমানে যথাযথ পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের অভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদাক্রমের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর অব্যাহত অবনতি ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।