টাকার লোভে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলাটিপে হত্যা করা হয় হাফেজ জুনায়েদকে

পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়াটাই কাল হলো হাফেজ জুনায়েদ হোসেন জিসানের (২১)। ‘পরিবারকে চাপ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে’ এমন ভাবনা থেকে জুনায়েদকে হত্যা করা হয়। তাকে মাঠার সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে গলাটিপে হত্যা করেছে মিশকাতুর রহমান মিশকাত (২০)। মিশকাত চট্টগ্রামের আনোয়ারার পীরখাইন পূর্বপাড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাগু মাস্টার বাড়ির মিজানের ছেলেন।

মেশকাতকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৬ এপ্রিল) তার বরাতে এমন তথ্য জানান সিএমপির বায়েজিদ থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা।
ওসি সঞ্জয় বলেন, জুনায়েদকে হত্যার পর তার মোবাইল নিয়ে যায় মিশকাত। মিশকাত মোবাইলটি বিক্রি করতে দেয় আনোয়ারার আরেক যুবকের কাছে। আনোয়ারা থেকে সেই মোবাইল বিক্রি হয় চন্দনাইশে। আমরা সেটি উদ্ধার করেছি।
জুনায়েদের মোবাইল বিক্রির আগে মিশকাত ওই মোবাইল থেকে জুনায়েদের মা জেসমিন আক্তারকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়।

পুলিশ জানায়, টাকা দাবি এবং হত্যার হুমকির কল রেকর্ড মিশকাতের আরেক বন্ধু শোনে ওটি মিশকাতের কণ্ঠ বলে নিশ্চিত করে। এরপর পুলিশ মিশকাতকে খুঁজে গ্রেপ্তার করে।

সিসি ক্যামরার ফুটেজে যা ছিল—
ইলিয়াছ কলোনী সংলগ্ন সওদাগর কলোনীর আবদুল করিম এর ভাড়া ঘরের ১৪নং কক্ষে অভিযুক্ত মেশকাতুর রহমান মেশকাত (২০) আগ থেকেই অবস্থান করছিল। ভিকটিম জুনায়েদ হোসেন ১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭.৩৩ মিনিটের সময় ঘটনাস্থলে আসলে অভিযুক্ত ভিতর থেকে দরজা খুলে দেয়। এরপর সন্ধ্যা ৭:৫৭ মিনিটে ভিকটিম এবং অভিযুক্ত একই সাথে রুম থেকে বাইরে যায় এবং পুনরায় রাত ৮:০১ মিনিটে রুমে প্রবেশ করে। রাত ৯:০৭ মিনিটের সময় অভিযুক্ত মেশকাতুর রহমান রুম থেকে বাইরে বাইর হয় এবং দরজা বন্ধ করে চলে যায়। আবার রাত ৯:১০ মিনিটে অভিযুক্ত মেশকাত বাইর থেকে দৌড়ে এসে রুমের তালা খুলে রুমে প্রবেশ করে। প্রায় ০১ (এক) ঘন্টা পর মেশকাত দরজা তালাবন্ধ করে চলে যায়, আর ফিরেনি।

কল রেকর্ডই খুনি শনাক্ত করে—
১ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে হাফেজ জুনায়েদের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে ভিকটিমের মায়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে ভিকটিম জোনায়েদ হোসেন প্রকাশ জিসানকে ফেরত পেতে হলে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। ৩ এপ্রিল রাতে জুনায়েদের মরদেহ উদ্ধার করার পর তার মা পুলিশকে সেই কল রেকর্ড শোনান। পুলিশ জুনায়েদের আরেক বন্ধুকে সেই রেকর্ড শোনালে সে কণ্ঠটি মিশকাতের বলে নিশ্চিত করে। মিশকাতকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিশকাত খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

খুনির জবানে খুনের বর্ণনা—
ভিকটিম হাজেফ জুনায়েদ হোসেন জিসানের বাবা একজন প্রবাসী। তারা উভয়ে একে অপরের পরিচিত। জুনায়েদ মাঝে মধ্যে মিশকাতের বাসায় আসা-যাওয়া করতো। গত ১ এপ্রিল রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়ানোর হাদিয়া বাবদ পাওয়া টাকা নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। মা ও ছেলের মনোমালিন্যের বিষয়টি মিশকাত জানে। তারপর পরিকল্পনা করে তার পরিবার থেকে টাকা আদায়ের।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মেশকাত ফার্মেসী থেকে এক পাতা ১০ (দশটি) ঘুমের ঔষধ কিনে এবং বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হাজীরপুল মাবিয়া স্টোর থেকে মাঠা কিনে। বাসায় এনে উক্ত ঘুমের ঔষধ ও পানীয় (মাঠা) একত্রে মিশিয়ে রাখে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জুনায়েদ তার বাসায় আসলে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত পানীয় তাকে খাইতে দেয়। মাঠা খেয়ে ঘুমের ঘোরে দুর্বল হয়ে যায় জুনায়েদ। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে বাথ রুমে ফেলে দিয়ে পিঠের ওপর বসে গলা টিপে হত্যা করে!

ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, মিশকাতকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।