টানেলের জনপদে বাঁশের সাঁকো, পরিবর্তনের দাবি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম নদীর তলদেশে টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল । উন্নয়নের এই খবর ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। যদিও এই জনপদের অনেক স্থান রয়েছে যেখানে এখনও পথ পার হতে হয় বাঁশের সাঁকোয়। যে বিষয়টি নিয়ে খুশি নন এলাকাবাসী কিংবা জনপ্রতিনিধি। আর তাই নির্বাচিত হয়েই গুরুত্বপূর্ণ ২ প্রকল্প নিয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় যোগ দিয়ে এ বিষয় তুলে ধরেন তিনি। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিষয়টি আমলে নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পানি সম্পদ বিভাগকে এই দুই প্রকল্পের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

জেলা প্রশাসনের সমন্বয় সভায় চেয়ারম্যানের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলো—আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের মাঝামাঝি সরেঙ্গা সাপমারা খালের উপরে থাকা বাঁশের সাঁকো। এছাড়া বিলীন হয়ে যাওয়া বাকখাইন স্লুইস গেটের পুন:নির্মাণ ও ভোগান্তি থেকে মুক্তির দাবিও জানান তিনি।

এলাকাবাসীর মতে, টানেলের জনপদে বাঁশের সাঁকো রয়ে যাওয়ায় দুঃখের বিষয়। এই একটি বাঁশের সাঁকো উন্নয়নকে অপরিপূর্ণ করছে।

তারা বলেন, প্রতিবছর জোয়ার ভাটায় সাকোঁটি কয়েকবার তলিয়ে গেলেও তা জনগণের অর্থে নির্মাণ করা হয়। এভাবে আর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচলের ব্যাপক দুর্ভোগে কেটে গেছে কয়েক যুগ; দুর্ঘটনা ঘটেছে বহুবার। তবুও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জনপ্রতিনিধিদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারার রায়পুর ও সরেঙ্গা ইউনিয়নের মাঝে সাপমারা খাল। খালের ওপর একটি সাঁকো দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু শঙ্খ নদের প্রবল ঢলের তোড়ে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে সাঁকোটি। তাই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

প্রায় ৩০ ফুট লম্বা সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সাকোঁতে উঠলেই দুলতে থাকে। কাঠের তৈরি পাটাতন ও খুঁটিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

খালপাড়ে বসবাসকারী মোবারক হোসেন বলেন, সাপমারা খালটি শঙ্খ নদ থেকে বেরিয়েছে। গত কিছুদিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে শঙ্খ নদের স্রোত খালে প্রবেশ করছে।

রাখাল দাশ নামে অরেকজন বলেন, প্রতিদিন শত শত মাছ ব্যবসায়ী ও জেলে জুঁইদণ্ডী থেকে রায়পুরে যাতায়াত করেন। আবার রায়পুর থেকে অনেক শিক্ষার্থী জুঁইদণ্ডীর জে কে এস উচ্চ বিদ্যালয় ও আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। নড়বড়ে এই সাঁকোই তাদের চলাচলের ভরসা।

উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, রায়পুরের লোকসংখ্যা ৪০ হাজার ৯৭০ জন। অপরদিকে জুঁইদণ্ডীতে বসবাস করে ১৯ হাজার ৯৫ জন মানুষ। এ দুই ইউনিয়নের এক-তৃতীয়াংশ জনসাধারণই সাপমারা খালের বাঁশের সাঁকোর ওপর যাতায়াতের জন্য ভরসা করে।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, জনগণের জন্য কাজ করতে আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। নির্বাচনের আগে ওই গ্রামের মানুষের কাছে ভোট চাইতে গেলে ভোটারদের আশ্বাস দিয়েছি আমার হাত ধরে এ সাঁকোর পরিবর্তন হবে। তাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জেলা প্রশাসনের প্রথম সমন্বয় সভায় সাঁকোটি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব রেখেছি৷ জেলা প্রশাসকও আামকে আশ্বস্ত করেছে সাঁকোটির ব্যাপারে।

টানেলের জনপদে বাঁশের সাঁকো, পরিবর্তনের দাবি 1

তিনি আরও বলেন, আমার উপজেলায় একটি বাঁশের সাঁকো রয়ে গেছে এটা লজ্জাজনক বিষয়। আমি চাই উপজেলায় কোনো বাঁশের সাঁকো থাকবে না। এছাড়া উপজেলার যেখানে যেটা প্রয়োজন সেটা বাস্তবায়নের জন্য সব করে যাব৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তার ধারাবাহিকতায় আনোয়ারায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করব। কোনো অন্যায় ও অনিয়ম করতে দিবো না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।