টেস্টে একবিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম জয় পেলো বাংলাদেশ

মিরপুরে একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসের তৃতীয় এবং একবিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম জয় পেলো বাংলাদেশ। এই জয় যেমন দেশের ক্রিকেটের সুনাম বাড়াচ্ছে তেমনি মনোবল বাড়াচ্ছে খেলোয়াড়দের। নাজমুল শান্তের এক ম্যাচে দুই শতক, মুমিনুলের মধুর প্রত্যবর্তনের সাথে তাসকিন-এবাদতদের নৈপুণ্যে ভরা বোলিংয়ের সামনে সফরকারীরা যেন দাড়াতেই পারেনি।

রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এসেছিল প্রথম জয়ের ম্যাচেই। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া সেই জয়টি ছিল ২২৬ রানের। আর এবার মিরপুর টেস্টে ৬৬২ রানের ‘হিমালয়’ টপকাতে গিয়ে ১১৫ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানরা। ফলে ৫৪৬ রানে ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। রানের হিসাবে যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জয়।

রানের হিসাবে বাংলাদেশের চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড আছে কেবল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। আর ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারায় অস্ট্রেলিয়া। আর একবিংশ শতাব্দীতে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯২ রানে হারিয়েছিল প্রোটিয়ারা। আর ২০০৪ সালে পাকিস্তানকে ৪৯১ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

আফগানদের বিপক্ষে এ টেস্টে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয় খেলেছেন দারুণ, মিডল অর্ডারের দায়িত্ব ভালোভাবেই সামলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিমরা। ব্যাট হাতে বড় স্কোর এনে দেওয়ার পর বোলিংয়ে নিজেদের দায়িত্ব দাপটের সঙ্গে পালন করেছেন টাইগার বোলাররা। আফগান ব্যাটারদের গতি ও স্পিন ঘূর্ণিতে করেছেন কুপোকাত।

প্রথম ইনিংসে জয়ের সঙ্গে ২১২ রানের রেকর্ড জুটিতে শান্ত করেছিলেন দুর্দান্ত এক শতক। এর পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তার ব্যাটে এসেছে এক সময়োপযোগী সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে জাকির, জয়, মুমিনুল, লিটন, মুশফিকদের যোগ্য সঙ্গে ৬৬২ রানের পর্বতসম এক লক্ষ্য দাড়ায় আফগানদের সামনে।

অধিনায়ক লিটন দাস ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করলে তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানিস্তান। কিন্তু এদিনও ব্যর্থ হন দুই ওপেনার। দলীয় সাত রানেই দুই ওপেনারের বিদায়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী। কিন্তু তাসকিনের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে তাকে। এরপর নাসির জামালকে নিয়ে দিনের বাকি সময় পার করেন রহমত শাহ।

৬১৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে আফগানিস্তান। কিন্তু ইবাদত, শরীফুলের বোলিং তোপে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি তারা। ইবাদতের বলে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে কট বিহাইন্ড হয়ে প্রথমে সাজঘরে ফিরেন নাসির জামাল। এরপর প্রথম ইনিংসে আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা আফসারকেও স্লিপে মিরাজের ক্যাচে পরিণত করেন শরীফুল।

আফগানদের হয়ে এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন আগের দিন তাসকিনের বলে মাথায় আঘাত পাওয়া অধিনায়ক হাসমত উল্লাহ শাহিদীর কনকাশন বদলি বাহির শাহ। কিন্তু দলের জন্য সুখবর বয়ে আনতে পারেননি তিনিও। শরিফুলেরই আরেক ওভারে স্লিপে তাইজুলের তালুবন্দী হন তিনি, ফিরে গেছেন মাত্র সাত রান করেই।

এদিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও আফগানদের হয়ে ক্রিজের একপ্রান্তে ঘাটী গেড়েছিলেন রহমত শাহ। শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়েছে তাকেও। তাসকিনের বলে লিটনের গ্লাভসবন্দী হয়ে ফিরে গেলে আফগানদের পরাজয় এড়ানো তখন অবাস্তব কল্পনা।

৯১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ৯৮ রানে করিম জানাতকে দুর্দান্তভাবে বোল্ড করেন তাসকিন। এরপর আফগানদের বাকি উইকেট গুলো দ্রুতই তুলে নিলে জয়ী হয় বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে টাইগারদের হয়ে দুর্দান্ত খেলেন দুই ব্যাটার জয় ও শান্তর নজরকাড়া ১৪৬ রানের সঙ্গে জয় খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস। আর মুশফিক ও মিরাজের অর্ধশতক ছোঁয়া ইনিংসে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানের সংগ্রহ পান টাইগাররা। বল হাতে আফগানদের হয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার নিজাত মাসুদ।

এদিকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে আল ছড়াতে পারেননি আফগানরা। ৩৯ ওভার খেলে দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগেই ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যান তারা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৬ রানের লিড ব্যাটিং শুরু করে জাকির-জয়রা। জয় এদিন ব্যর্থ হলেও আগের ইনিংসে এক রান করে আউট হওয়া জাকির ৭১ রান করে রান আউট হন, শান্তর সাথে গড়েছিলেন ১৭৩ রানের জুটি।

দ্বিতীয় ইনিংসেও শান্ত করেছেন দুর্দান্ত এক শতক। সেই সঙ্গে ২২ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পান সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও। মুমিনুল-লিটনের ১৪৩ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ৬৬২ রানের পররবত সমান এক লক্ষ্য দাড়ায় আফগানদের। ফলাফল, চতুর্থ দিন পার হতেই জয় পায় বাংলাদেশ।

টেস্টে অসহায় আত্মসম্পর্ণের পর আপাতত আফগানিস্তান দল ফিরে যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে পহেলা জুলাই তারা আবার বাংলাদেশে ফিরবে। সিলেটে তিন ওয়ানডের পর চট্টগ্রামে দুই টি-টোয়েন্টি খেলবে দুই দল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।