ডিজিটালে মিলছে হয়রানিমুক্ত ভূমিসেবা

আনোয়ারা-কর্ণফুলী

একটা সময় দালালদের ভিড়ে টেকা দায় ছিল  চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসগুলোতে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এসব দালালের কারণে আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হতেন। কিন্তু অনলাইন পদ্ধতিতে ‘ই-নামজারি’ চালু হওয়ায় বদলে গেছে দুই উপজেলার ভূমি অফিসের চিত্র।

আনোয়ারা ও কর্ণফুলী ভূমি অফিস সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে আনোয়ারা ভূমি অফিসে ৩ হাজার ৯২২টি আবেদন করেছেন। সবমিলিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৩টি। এতে গড়ে সময় লেগেছে মাত্র ২৭ দিন। অপরদিকে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে ১ হাজার ৫৫০টি আবেদনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ১৭৮টির, আর নামঞ্জুর হয়েছে ৩৭২টি।

সেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা বলেন, ডিজিটালে হয়রানি মুক্ত হয়েছে ভূমি সেবা। আগে ছয় মাস নয় মাস বছর পার হয়ে যেত একটি নামজারি বা ভূমি সেবা পেতে। প্রধানমন্ত্রী আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছায় সেই নামজারি যদি এখন আমরা পাচ্ছি এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যে। একটি নামজারির জন্য আবেদন করলে এক সপ্তাহের মাথায় সেই নামজারি খতিয়ান হাতে পাচ্ছি আমরা। এতে আমরা আন্তরিকভাবে খুশি এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বারখাইন ইউনিয়নের আকবর আলী সুমন বলেন, সরকারের ডিজিটালাইজেশনের অন্যতম হচ্ছে ভূমি সেবা ডিজিটালাইজেশন। এরফলে কোন নগদ লেন-দেন ছাড়াই ভূমিসেবা গ্রহীতারা কোন সময়ক্ষেপণ ছাড়া ও হয়রানিমুক্তভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে স্বচ্ছন্দে সেবা নিতে পারছেন।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযূষ কুমার চৌধুরী বলেন, এখন আর তদবিরকারী কিংবা দালালের পেছন পেছন দৌড়াতে হয় না সেবাপ্রত্যাশীদের। এখন অনলাইনে খুব সহজে সেবা নিতে পারছেন অনেকে।

আনোয়ারা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, সরকারি নির্দেশনার পর থেকে অনলাইন সেবার বিষয়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। সেবাসংক্রান্ত প্রচারপত্র ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিলবোর্ড স্থাপন এবং অনলাইনে প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়া নিয়ম করে শুনানির আয়োজন করা হয়। এসব কারণে মানুষ এখন অনলাইনে সেবা নিচ্ছে। সাড়াও মিলছে বেশ। এতে করে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের অর্থ ব্যয়ও অনেক কমে আসছে।

শতভাগ অনলাইন সেবা কার্যক্রমের ফলে ভূমি অফিসের অনিয়ম, দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব এখন আর নেই। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মচারীদের সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে বিনয়ী আচরণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

ই-নামজারি সেবা পেতে যা করতে হয়

সরকারি ফি জমা ছাড়াও দলিলের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও আরএস খতিয়ানের ফটোকপি জমা দিতে হয়। সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন করের (খাজনা) রসিদ জমাসহ আবেদনকারীর মুঠোফোন নম্বর দিতে হয়। ভূমি অফিস ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগেও ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে (https://minland.gov.bd) গিয়ে গ্রাহক এ সেবা পেতে পারেন।  

অনলাইনে আবেদনের পর গ্রাহকের নামজারি আবেদন সম্পন্ন হয়েছে কি না, তা আবেদনকারীর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। এর বাইরেও আবেদনকারীরা তাঁদের ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে সরাসরি ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।