দেনা পাওনার মধ্যেই সমাজের বিবর্তন হচ্ছে : ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম

হাটহাজারীর সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, “আমাদের সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। আমরা কি পাব, এমনকি আমাদের পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে কি পাব সে হিসাব নিকাশ নিয়ে চিন্তা করি। এখন তো দেনা পাওনার মধ্যে সমাজের বিবর্তন হচ্ছে”

ফতেয়াবাদ নাগরিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব সদ্য প্রয়াত আলহাজ্ব আলী আজগর চৌধুরীর নাগরিক শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উক্ত কথা বলেন। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে ফতেয়াবাদ আদর্শ ও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে ফতেয়াবাদ নাগরিক কমিটি এ শোকসভার আয়োজন করে।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “আলী আজগর চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয় ১৯৭৯ সালে। তার সাথে আমার ছিল পরম বন্ধুত্ব। মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে আমার অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। মৃত্যুর আগে একটি কাগজে তার লিখে যাওয়া কিছু কথার উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘ওই কাগজে আমার সাথে তার সম্পর্ক যে কত গভীর ছিল তা তিনি উল্লেখ করে গেছেন। আমি যেভাবে তার জন্য অনুভব করি, তিনিও আমার জন্য সেভাবে অনুভব করতেন। মৃত্যুর আগে দুজনের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে তিনি যে একটি কাগজে লিখে গেছেন সেটি আমি জানতাম না। আমি অকপটে বলছি, আমাদের দীর্ঘ ৪২ বছরের সম্পর্কের মধ্যে তিনি আমার কাছে কিছুই চাননি।”

প্রয়াত আলী আজগর চৌধুরীর পারিবারিক কাঠামো বর্তমান সমাজে বিরল দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ”
“এক সময় তার বড়ছেলে ফতেয়াবাদে তার পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। পারিবারিক বন্ধনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সন্তানের শহরে চলে যাওয়ায় বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি আলী আজগর চৌধুরী। ৬ মাস ওই সন্তানকে দেখতে শহরে যাননি আলী আজগর চৌধুরী। পরে অভিমানি বাবার কোলেই ফিরে আসে সেই সন্তান। ‘মাতৃভূমি’ ফতেয়াবাদের প্রতি ছিল এমন টান ছিল আলী আজগরের। এখন তো আমরা নিজের, স্ত্রীর এবং ছেলেমেয়েদের নিয়েই ব্যস্ত থাকি। মা- বাবার চিন্তা করে না সন্তানেরা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আলী আজগর চৌধুরীর পারিবারিক কাঠামো এ সমাজের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত আমি মনেকরি।

তিনি আরও বলেন, আলী আজগর চৌধুরী পার্থিব জগতে বিত্ত-ভৈববের মালিক না হলেও তার সন্তানদের মানুষ করেছেন। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার বড় ছেলে আলী আরশাদ চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে। সম্প্রতি সে পিএইচডি করেছে। আরেক সন্তানকে আইনজীবী বানিয়েছেন। বাকি দুই সন্তান ব্যবসা করে। একজন পিতা হিসেবে আলী আজগর চৌধুরী সফল। শুধু সন্তানদের দিকেই যে তার দৃষ্টি ছিল এমনটি নয়, সারাজীবন তার ধ্যান, জ্ঞান ছিল ফতেয়াবাদ তথা সমাজের উন্নয়ন।”

আলী আজগর চৌধুরীর সাথে দীর্ঘ ৪২ বছরের বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, “এ ৪২ বছর আমি রাষ্ট্রের নানা জায়গায় ছিলাম। কিন্তু আলী আজগর কোনদিন নিজের জন্য কিংবা অন্যের জন্য আমার কাছে অন্যায় আবদার করেননি। আজকাল রাজনীতি বদলে গেছে। সমাজ ব্যবস্থা বদলে গেছে। এই বদলানোর ধারায় ছিলেন না আলী আজগর চৌধুরী। তাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছি তিনি সফলভাবেই অর্পিত দায়িত্ব শেষ করেছেন। নিজের জন্য কিছু না চাইলেও এলাকায় রাস্তাঘাট, সমাজে অবহেলিত মানুষের জন্যই আমার কাছে তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চাইতেন। যখন যে প্রকল্প দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করেছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ করে বলেননি যে, “আলী আজগরকে আপনি ওমুক প্রজেক্ট দিয়েছেন তিনি তা যথাযথ বাস্তবায়ন করেননি।”

কখনো মতের অমিল দেখা দিলেও রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তিকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন আলী আজগর চৌধুরী। ব্যবহারে তিনি ছিলেন বিনম্র এবং অমায়িক। আমার রাজনৈতিক জীবনে তাকে যতবার ডেকেছি ততবার পাশে পেয়েছি, যুক্ত করেন ব্যারিস্টার আনিস।

ফতেয়াবাদ নাগরিক কমিটির সহসভাপতি আলী নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলী আজগর চৌধুরীর নাগরিক শোকসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. সজীব কুমার ঘোষ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এবং সিডিএর সাবেক বোর্ড সদস্য ইউনুচ গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতির সভাপতি এবং উত্তর জেলা আওয়ামী নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আজগর চৌধুরী। এছাড়া শোকসভায় প্রয়াত আলী আজগর চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তার বড় ছেলে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।