পছন্দের সঙ্গে মিলে না দরে, শেষ মুহূর্তে ক্রেতার ভিড় শপিংমলে

“এ দোকান সে দোকান ঘুরে পোশাক পছন্দ হলেও বাজেটের সাথে মিলছেনা দর-দাম। আয়ের সঙ্গে ব্যয় মিলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাদের। কোন রকমে বাচ্চাদের ঈদ শপিং সারতে পারলেও এখনও নিজের জন্য কিছু নিতে পারিনি। ঈদের আগের দিনই ভরসা করছি যদি কিছুটা দাম কমে।”

শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকার একটি শপিংমলে স্বপরিবারে ঈদের বাজার করতে এসে এসব কথা বলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক তাহমিনা আকতার নামে এক নারী ক্রেতা।

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। বাকি মাত্র এক বা দুই দিন। পরিবারের সবার জন্য চাই নতুন পোশাক। সাধ্যের মধ্যে সবাইকে ঈদ উপহার দিতে ছোট বড় শপিংমল থেকে ফুটপাতে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে উৎসব তেমন চাঙা হয়নি। কিন্তু এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। গতবারের চেয়ে এবার পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

আলো ঝলমল বিপণীবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা। পণ্য কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে হন্যে হয়ে ঘুরছে মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই বছর পর ব্যবসায় দীর্ঘ খরা কাটিয়ে অবশেষে উৎসবকেন্দ্রিক বাণিজ্যের পালে হাওয়া লেগেছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার ঈদের বাজারে নেই কোনো কড়াকড়ি, বিধিনিষেধ। গত দুই বছর ব্যবসায় লোকসান ছিল। এবার ঋণ করে ভয়ে ভয়ে বিনিয়োগ করেছেন তারা। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হয়নি। এ বছর প্রথম রোজা থেকেই বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিনই বিক্রি বাড়ছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন তারা। দীর্ঘদিন পর ক্রেতারা ফিরে পেয়েছেন ঈদে কেনাকাটার আমেজ। তবে দোকানিদের দাবি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও পোশাকের মানের সঙ্গে দাম ঠিক থাকলেও বেড়েছে শ্রমিকদের বেতন ভাতা, বিদ্যুৎ এবং দোকানে খরচ।

পাঞ্জাবি কিনতে আসা আকরাম হোসেন রানা বলেন, ‘পরিবারের সবার জন্য কেনা শেষ। এখন নিজের জন্য পাঞ্জাবি কিনব। অনেক পোশাক পছন্দ হলেও দামের জন্য মিলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এবার পোশাকে দাম চড়া। ফাইজুর নেচ্ছা নামে এক ক্রেতা জানায়, ভারতীয় কাপড়ের ডিজাইন ও রং ভাল লাগলেও দাম কিছুটা বেশি। তাই দেশি সুতি থ্রি-পিছ নিয়েছি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে রাত দিন ক্রেতা সমাগম ঘটছে। আর বেচাবিক্রিও বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। সকালে দোকান খোলার পর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতার ভিড়, চলে সেহরির আগ পর্যন্ত। সন্ধ্যায় ইফতারির সময় কিছুটা ভিড় কম থাকে। প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতার চাপ সামাল দিতে অতিরিক্ত বিক্রয়কর্মীও নিয়োগ দিয়েছেন দোকানিরা।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, এ বছর মেয়েদের জন্য বাজারে এসেছে ‘সোনিয়া ও নিহারা’ নামে ভিন্ন পোষাক। ঈদকে সামনে রেখে কর্ণফুলী ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকেও আসছেন ক্রেতারা। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কথা মাথায় রেখেই শপিংমলগুলোতে এবারের ঈদে বিভিন্ন ধরণের পোষাক তুলেছেন তারা।

ঈদ বাজার ও শপিংমলগুলোতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বা সড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে পুলিশের বাড়তি নজরদারী রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ।

তিনি জানান, আমরা জনগণের জান-মাল রক্ষার জন্য সব সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন বিপণি-বিতান দোকান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সব সময় টহল দিচ্ছে। যানজট নিরসনেও বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে পুলিশ।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পীযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন শপিংমলে উপজেলা প্রশাসন নজরদারীতে রয়েছে। যাতে পণ্যের প্রাইজ ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইজ ট্যাগ দিয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য নিতে না পারে। এমন কোনো অভিযোগ পেলে তাদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।