পর্যটকদের আকর্ষণ—ফকির মুরং ঝরনা

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাগলী উপর পাড়ায় ফকির মুরং ঝরনার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ভ্রমন পিপাসুদের দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। এর আশেপাশে ছোট বড় কয়েকটি ঝর্ণা রয়েছে। ঝরনা থেকে অবিরাম ধারায় পানির প্রবাহমান ধারা, পাখির কিচির মিচির শব্দ এবং পাহাড়, বন বেষ্টিত এই ফকির মুরং ঝরনা যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি, তাই প্রতিদিন ভীড় লেগে আছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বিশেষ করে বর্ষায় নবরূপে প্রাণ ফিরেছে এই ঝরনার।

এলাকার বাসিন্দা সংগীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার শিক্ষক সূর্য্যসেন তনচংগ্যা বলেন, আমরা দাদুদের মুখ থেকে শুনেছি আজ থেকে শত বছর আগে এই পাহাড়ে এক সাধক বা ফকির ধ্যান করতো। লোকজন পুজা দিতো, মানত করতো, ফকির ধ্যান করতো বলে স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ফকির মুরং বা ফকির কুয়া বা ফইরা মুরং ঝরনা।

ঘাঘড়া—বড়ইছড়ি সড়কের বটতলি এলাকার পূর্ব পাশ ধরে ৩ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ আর ছড়া পার হয়ে এই স্থানে পৌঁছাতে হয়। আশেপাশে শত শত তনচংগ্যা পরিবারের বসবাস। পথিমধ্যে পাগলিমুখ পাড়া, পাগলি মধ্যম পাড়া গ্রাম পার হয়ে পাগলি উপর পাড়া এই ঝর্ণার দেখা মিলবে। এই স্থানে যেতে যেতে পর্যটকরা আরোও উপভোগ করতে পারবেন পাহাড় হতে বয়ে চলা ছড়ার পানির বহমান ধারা, আশেপাশে অনেকগুলো পাহাড়ী গাছ গাছালি এবং ছোট ছোট ঘর।

বুধবার (১৯ জুলাই) ঝরনা দেখতে আসা কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমন দে জানান, এই ঝরনায় আসার পথে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছোট ছোট ঘর, ঝিরি থেকে বয়ে যাওয়া হীমশীতল পানি সত্যিই উপভোগ্য।
তিনি আরোও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি বেইস ট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তারই আলোকে এই ফকির মুরং ঝরনার সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে অবকাঠামো নির্মাণ করে এই ঝরনাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলা হবে।

এই ঝরনা দেখতে যাওয়া কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমকর্তা রুহুল আমিন জানান, এই ঝরনায় আসার পর ঝরনাটার দিকে থাকালে সত্যি প্রাণ ভরে যায়।

ঝরনা দেখতে আসা পর্যটক খন্দকার মাহমুদুল হক মুরাদ ও ঝিমি চাকমা জানান, অপুর্ব এই ফকিরা মুরং ঝরনা যেন প্রকৃতির অপূর্ব নির্দশন। বিশেষ করে ঝরনায় আসার সময় ঝিরিঝিরি শব্দে পানির প্রবাহমানধারা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।

১০০ নম্বর ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার জানান, স্থানীয় ভাষায় এটা ফইরা মুরং ঝরনা নামে পরিচিত। যদি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এখানে উন্নয়নমুলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় তাহলে পর্যটকের আগমন আরোও বাড়বে।

এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তপন তনচংগ্যা জানান, এই ঝরনা দেখতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই যেন এই ঝর্নায় আসার পথটুকু উন্নয়নের ছোঁয়া পায় এবং পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হয়।
তিনি আপসোস করে বলেন, আমরা মাঝে মাঝে দেখতে পাই অনেক পর্যটক নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহন করে আশেপাশে মানুষের ফলমূল নষ্ট করে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এসব কাজ হতে বিরত থাকতে পর্যটকদের অনুরোধ জানাই।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।