ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ধ্বংস হচ্ছে ৩ ফসলি জমি

ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাকে আলাদা করেছে ফেনী নদী। সম্প্রতি ফেনী নদীতে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ায় গবেষকরা নদীর স্বাভাবিকতায় ফিরার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবী খাদ্য সংকটের শঙ্কায় রয়েছে। দেশের প্রতি ইঞ্চি আবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অংশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে একশ্রেণির রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ধ্বংস করছে আবাদি জমি। যেসব জমিতে তিন মৌসুমে চাষাবাদ করা হতো। সরকারী অনুমতি ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফেনীর নদীর করেরহাট ও হিঙ্গুলী ইউনিয়নের অংশে অবাধে দিনে রাতে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার করেরহাট ও হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং, আজমনগর অংশে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক ঘনফুট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে এক দিকে যেমন নদী ভাঙ্গন বাড়ছে তেমনি বালু স্তুপ করে রেখে দখল করা হয়েছে ফসলি জমি, মানুষের বাড়ির আঙিনা, বিদ্যালয়ের মাঠও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, শক্তিশালী মেশিন দিয়ে বালু কাটার ফলে প্রতিদিন আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ৩ ফসলী জমিগুলো চোখের সামনে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের উপর আসে মামলা হামলা হুমকি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যু ও বালু ব্যবসায়ীরা। অথচ হুমকির মুখে পড়ছে ফেনী নদী, বাড়িঘর ,৩ ফসলী জমি। স্থানীয়রা আরো জানান রাতের আঁধারে তাদের ভয় ভীতি প্রদর্শনে লক্ষ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়।

বালু কাটার বিষয়ে লিজা এন্টাপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম বলেন, আমি আমার ইজারাকৃত অংশে বালু কাটতেছি। পশ্চিম জোয়ার অংশে ছাগলনাইয়াতে কে বা কারা এসে কেটে নিয়ে চলে যায়। আপনি আসেন মোবাইলে এত কথা বলা যাবে না।

হিঙ্গুলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বৃহত্তর বালু কমিটির সভাপতিও। স্থানীয়দের অভিযোগ অবৈধ বালু উত্তোলনে তিনিও সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো লোক বালু উত্তোলন করে না। কে বা কারা কাটে আপনারা খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের দারস্থ হন।’

চট্টগ্রাম জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘নদীর স্বাভাবিক গতি পথ পরিবর্তন ও নাব্যতা সঙ্কট যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

মিরসরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান জানান, ফসলি জমি নষ্ট করার অধিকার কারো নেই, এটি অন্যায়। এ কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।