বিএনপির হরতালে মাঠে নাই ডা. শাহাদাত—গোলাম আকবর

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির ঢাকা সমাবেশে গণ্ডগোলের ফলে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল ডাকে দলটি। কিন্তু হরতালে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির পক্ষে কোনো নেতা মাঠে নামেননি। দলের আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং আবুল হাশেম বক্করকে কোনো নেতাকর্মী মুঠোফোনেও পাননি।
একই অবস্থা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারেরও। গোলাম আকবর নিজেও মাঠে নামেননি। তার কোনো অনুসারীকেও মাঠে দেখা যায়নি। উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে গোলাম আকবর খন্দকারের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায় হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, সদস্য আসমত উল্লাহ বাহাদুর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সারোয়ার সেলিম, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুলের নেতৃত্বে নগরীর অক্সিজেন এলাকায় পিকেটিং করেন।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সকাল ১০টা দিকে নগরীর শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় পিকেটিং করেছেন। দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল চট্টগ্রাম—কক্সবাজার সড়কে এবং চান্দগাঁও থানা ছাত্রদল চান্দগাঁও এলাকায় পিকেটিং করেছে।
অপর দিকে নগর যুবদলের সহ-সভাপতি ভিপি সুমনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পাহাড়তলী এলাকায় এবং নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও শরীফুল তুহিনের নেতৃত্বে হালিশহর নয়াবাজার বিশ্বরোড এলাকায় পিকেটিং করেছে।

এবিষয়ে জানতে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করও গা ঢাকা দিয়েছেন। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, শনিবার রাতে তার বাসায় পুলিশ অভিযান চালাতে যায়। গেইট বন্ধ থাকায় পুলিশ প্রবেশ করতে পারেনি। পরে রোববার সকাল ১০টায় তার বাসায় পুলিশ তল্লাশী চালায়। কিন্তু আবুল হাশেম বক্কর বাসায় ছিলেন না।

ডা. শাহাদাতের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোন এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাতের অনুসারী যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, নেতাকর্মীরা ঢাকায়, তাই পিকেটিং হয়নি। কতজন ঢাকায় গেছে জানতে চাইলে তিনি নিজেও ঢাকায় যাননি জানিয়ে বলেন, যারা ঢাকা গেছে তারা ওখানে আটকা পড়ছে। তবে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে নগর আহ্বায়ক কিংবা সদস্য সচিবের পক্ষ থেকে কী নির্দেশনা ছিল সেটাও জানাতে পারেননি আব্দুল মান্নান।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ডা. শাহাদাত হোসেন, আবু সুফিয়ান এবং আবুল হাশেম বক্কর—এই তিন সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করেছিল দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্র থেকে সময় দেওয়া হয়েছিল এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে জমা দিতে। এক মাসের পরিবর্তে এগারো মাস সময় নিয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে। গঠনতন্ত্রে নগর কমিটির আকার ১৫১ সদস্যের উল্লেখ থাকলেও এরস্থলে ২৭৫ সদস্যের ঢাউস কমিটি ঘোষণা করেছিল। যে কমিটির নেতারা এক জন্য আরেকজনকে চিনতেন না বলে হাসি-তামাসা ছিল।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে নগর বিএনপির সেই কমিটি ভেঙ্গে ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এখনো পর্যন্ত সেই আহ্বায়ক কমিটি বলবৎ আছে। নগর বিএনপি তার অধীনস্থ থানা এবং ওয়ার্ডগুলোর কয়েকটি কমিটি গঠন করতে পারলেও অধিকাংশ কমিটি গঠন করতে পারেনি।
ডা. শাহাদাত হোসেন নেতা হিসেবে কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন এবং ব্যক্তি হিসেবে ক্লিন ইমেজের অধিকারী। দলের স্বাভাবিক কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করলেও আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থাকার মতো নেতৃত্ব, কর্মী বাহিনী ডা. শাহাদাত এবং বক্কর তৈরি করতে পারেননি বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ। যার চিত্র আজকের হরতালে স্পষ্ট হয়েছে।

উত্তর জেলা বিএনপির প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলেও গোলাম আকবরের অনুসারীদের অবস্থাও একই। দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে গোলাম আকবর খন্দকার এবং তার অনুসারীদের মাঠে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা নগরে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের অনুসারীরা হাটহাজারীতে পিকেটিং করেছে। আকবরের অনুসারীদের আজ মাঠে দেখা যায়নি, ভবিষ্যতে কী হবে সেটার দিকে তাকিয়ে আছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।