ভোটারের তথ্যে গোঁজামিল—গিয়াসের পথে দিদার, সালাম, বাচ্চু, কিষাণ, ইমরানও

প্রবাসে অবস্থানরত ভোটারের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে চট্টগ্রাম-১ আসনের আলোচিত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয় যাচাই-বাছাইয়ের শুরুতেই। এরপর অসম্পূর্ণ তথ্য, ভুয়া তথ্যসহ নানান কারণে একে একে বাতিল হয় আরও ১৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন। সেই কাতারে যুক্ত হয়েছেন সীতাকুন্ড আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম দিদারুল আলম, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুস ছালাম এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু, চসিকের সাবেক কাউন্সিল বিজয় কিষাণসহ ১৮ প্রার্থীর মনোনয়ন।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মনোনয়ন যাচাই বাছাইকালে চট্টগ্রাম-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। চট্টগ্রাম-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান ও রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। সকলের মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
একই অভিযোগে চট্টগ্রাম-৩ আসনের নিজাম উদ্দিন নাছির ও আমিন রসূল নামে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

অন্যদিকে, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে চট্টগ্রাম-৪ আসনের ৪ প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মোহম্মদ ইমরান, দিদারুল আলম, আখতার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম-৫ আসনের দুই প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও ভোটার-সমর্থকদের ভুল তথ্য দেওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রথম দফা যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রামর জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার সমর্থকের তালিকায় গরমিল থাকায় মনোনয়ন পত্রগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল হলেও প্রার্থীদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থীর নথিপত্র পর্যাপ্ত না থাকায় তাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে রোববার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মোট ১৫১ জন মনোনয়ন জমা দেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই)
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যঅন মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি)
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে স্বাক্ষর ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হওয়াসহ এদের সবার মধ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ)
১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়ার অভিযোগে এই আসনে জাকের পার্টির নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তজোটের প্রার্থী আমিন রসূলের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড)
এই আসনে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিদারুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন ও মোহাম্মদ ইমরান এবং বিএনএফ প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। দলীয় পদের কোন কাগজ জমা দিতে না পারায় বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়ায় এই আসনের অন্য দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও মোহম্মদ ইমরানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতার হোসেন আয়করের কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আল মামুনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার সঙ্গে ভোটের লড়বেন—জাতীয় পার্টির দিদারুল কবির, ইসলামিক ফ্রন্টের মোজাম্মেল হোসেন, তৃণমূল বিএনপির খোকন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের শহীদুল ইসলাম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী)
এই আসনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছির হায়দার চৌধুরী ও শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তারাও ১ শতাংশ ভোটার-সমর্থকদের বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এমএ সালাম, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অন্যান্যদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান)
এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিউল আজমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে ভুল পাওয়া গেছে তার মনোনয়নপত্রে।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও)
এই আসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী কিষান, মহিবুর রহমান বুলবুল এবং মনজুর হোসেন বাদলের (বাংলাদেশ কংগ্রেস) মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে স্বাক্ষর ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হওয়াসহ এদের সবার মধ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী)
এই আসনে খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মৌলভী রশিদুল হকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তার আর্থিক বিবরণী অসম্পূর্ণ ছিল। তবে তাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দাখিল না করায় তাকে সোমবার পর্যন্ত তা দাখিলের সময় দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।