মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের

ফয়সাল, শাহাদাত, মারুফ, শাহেদ—৪ বন্ধু পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে স্বপ্ন দেখেন দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জনের। কেউ ব্যাচেলর করতে চান পাওয়ার টেকনোলজি কিংবা ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনে আবার কারও ইচ্ছে গ্লোবাল ইকোনমিক্স বা মেকানিক্যাল। আর এই স্বপ্ন পূরণে মালেশিয়াকে পছন্দের তালিকায় রাখছেন তারা। দেশটির স্বল্প খরচ এবং উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাঠ প্রক্রিয়া আকৃষ্ট করেছে তাদের।

ফয়সালদের মতো এ রকম শত শত শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বেচে নিচ্ছেন মালেশিয়াকে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় অনুষ্ঠিত ‘স্টাডি ইন মালয়েশিয়া-এডুকেশন ফেয়ার ইন বাংলাদেশ -২০২৪’এ গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহের চিত্র। শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন এই মেলায়। তার মধ্যে অনেকে ভর্তি হয়েছেন মালেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার কেউ কেউ অফার লেটারও পেয়েছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালেশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল নিয়ে বসেন মেলা প্রাঙ্গণে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজেরও স্টল ছিলো। সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কেউ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবার কেউ একাই আসেন মেলায়। অধীর আগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেন। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও প্রাণবন্ত আলোচনায় জেনে নেন যাবতীয় তথ্য।
মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের 1

মেলায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও নিজের সন্তানের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তথ্য নিতে ছুটে আসেন। মারুফা বেগম একজন স্কুল শিক্ষিকা। ছেলের মতো মায়েরও স্বপ্ন সন্তান মেরিন সায়েন্স নিয়ে বিদেশে পড়ুক। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মালেশিয়াকে বেচে নিয়েছেন তারা।

মারুফা বেগম বলেন, মালয়েশিয়ার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনার খরচ কম। সেই দেশের সরকার সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাদান ব্যবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে যার জন্য মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত। এছাড়া মালেশিয়া থেকে চাইলে ইউরোপের দেশেও যাওয়া যাবে।

রফিকুল ইসলাম মেলায় আসেছেন একমাত্র কন্যাকে নিয়ে। নিজের মেয়েকে খুব বেশি চোখের আড়াল করেন না। কোথাও দিতে হলেও নিরাপত্তার বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখেন। উন্নত ক্যারিয়ারের জন্য উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মেয়েকে অনুমত দিয়েছেন মালেশিয়ায় পড়তে যাওয়ার। আর তাই বাবা-মেয়ে এসেছেন এডুকেশন ফেয়ারে। রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জেনেছি। বাসায় গিয়ে মেয়ের মা ও ভাইয়ের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিবো কোথায় আবেদন করবে। মালেশিয়া একটি শন্তিপূর্ণ এবং মুসলিম দেশ তই মেয়েকে পাঠাতে রাজি হয়েছি।

জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্টাডি ইন মালয়েশিয়া- এডুকেশন ফেয়ার বাংলাদেশের শুরু হয়। ঢাকায় ২দিন চলার পর চট্টগ্রামে এই মেলা চলে সোমবার পুরোদিন। এরপর ১ মে সিলেটের রোজ ভিউ হোটেলে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলার আয়োজক মালেশিয়ার শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এডুকেশন মালেশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস (ইএমজিএস)। এই মেলার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা মালেশিয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সরাসরি আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন।

মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের 2

মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগেুলোর মধ্যে রয়েছে—সানওয়ে ইউনিভার্সিটি, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ইনভেসন (এপিইউ), নীলাই ইউনিভার্সিটি, অ্যাকাডেমি লাউত মালয়েশিয়া (এ এল এম), ইউএনআইটিএআর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ টুঙ্কু আব্দুল রহমান (ইউটিএআর), এস ইজিআই ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ সাইবারজায়া (ইউওসি), টুঙ্ক আব্দুল রাহমান ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি (টি এআর ইউ এম টি)।

জানতে চাইলে ইএমজিএসের লোকাল ইভেন্ট অরগানাইজার আরিফ সৈয়দ বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণে মালয়েশিয়া হচ্ছে বহুমুখী সুবিধা সংবলিত একটি আদর্শ দেশ। এরই মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত আগ্রহ বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ এডুকেশন ফেয়ারের আয়োজন।

তিনি বলেন, শিক্ষা মেলায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে অধ্যয়ন সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ, মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধির সাথে সরাসরি আলোচনা করে আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত থাকবে। মালয়েশিয়ায় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শর্তসাপেক্ষে অফার লেটারও দিচ্ছে। এ শিক্ষা মেলায় মালয়েশিয়ার খ্যাতিমান ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১টি হসপিটাল গ্রুপের প্রতিনিধিগণ অংশ নিয়েছে।

মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের 3

তিনি বলেন, দিনব্যাপী আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। কয়েক’শ শিক্ষার্থী এই মেলায় অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি ভর্তি এবং অনেকে অফার লেটার পেয়েছেন। চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই মালেশিয়ায় উচ্চশিক্ষার বিষয়ে আগ্রহী। যা আমাদের সব সময় মোটিভেশন যোগায়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া শিক্ষার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বিনিময় ও সহযোগিতার সেতুবন্ধন প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। ইএমজিএস বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে মালয়েশিয়ায় লেখাপড়ার জন্য বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১৯ হাজারের বেশি নতুন আবেদন এসেছে। এ আবেদন করা হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, উচ্চশিক্ষা গ্রহণে মালয়েশিয়া হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম কেন্দ্রকিন্দু।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।