মিথ্যা মামলায় সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসছেন বাদী

চট্টগ্রামে জায়গা-জমি অবৈধভাবে দখল করতে না পেরে সাংবাদিক এবং এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে নিজেই ফাঁসছেন তাহেরা লিল্লাহ (৫৮) নামের এক নারী। তিনি বাকলিয়ার সৈয়দশাহ রোড বাইলেনের গোলাম মাওলার স্ত্রী।
তাহেরা লিল্লাহর দায়ের করা মামলা তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—পিবিআই অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে ‘২১১ ধারায় প্রকাশ্য আদালতে বিচার’র প্রার্থনা করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, তাহেরা লিল্লাহ ৫ জুলাই ২০২৩ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪ এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- সি.আর ২৮১/২০২৩ (খুলশী)। মামলার আরজিতে তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম নগরীর জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে তার জায়গায় শেখ মোহাম্মদ আরিফ (৩৩) ও আবু তাহের (৫০) আরও ৫/৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে তার জায়গার নাম ফলক নিয়ে যায় এবং কেয়ারটেকারের কাছে চাঁদা দাবি করে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন।
পিবিআই ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। মামলায় উল্লেখিত স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়ার পাশাপাশি আশপাশের লোকজনের সাক্ষ্যও নেয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার কোনো সত্যতা পিবিআই পায়নি উল্লেখ করে জালালাবাদের তখনকার ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
মামলার বাদি তাহেরা লিল্লাহ উক্ত ঘটনার জন্য স্বাক্ষী করেছেন শাহনাজ বেগমকে। শাহনাজ বেগমকে তিনি তার নিয়োজিত কেয়ারটেকার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু পিবিআই তদন্তে পেয়েছে শাহনাজ বেগম প্রকৃতপক্ষে শেখ মুহাম্মদ আরিফের ভাড়াটিয়া। শাহনাজ বেগম তার পরিচয় শেখ মুহাম্মদ আরিফের ভাড়াটিয়া এবং বাদীনি তাহেরা লিল্লাহ’র মামলার বিবরণ মিথ্যা এই মর্মে উক্ত মামলার বিষয়ে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ঘোষণাও দিয়েছেন।

মিথ্যা মামলায় সাংবাদিককে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসছেন বাদী 1

মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৯৯০ সালে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির কাছ থেকে বরাদ্দ পেয়ে সেখানে তিনি বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করে গাছপালা রোপন করে কেয়ারটেকার নিয়োগ করেন এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগ দখল করে আসছেন।
কিন্তু পিবিআই তদন্তে উল্লেখ করেছে— ওই জায়গা সরকার থেকে পরিবহন পুল সমিতির সদস্য দয়াল হরি দাশকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা ৮ মার্চ ১৯৯০ (১২৬১ নং রেজিষ্ট্রি দলিল) সালে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রসিদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের খুলশী থানাধীন পূর্ব পাহাড়তলী মৌজার ৪নং জে.এল এর ১৪৫নং খতিয়ানের দাগ নং-৩৪, জমির পরিমাণ ১২ এর বিপরীতে খুলশী ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করছেন দয়াল হরি দাশের ওয়ারিশরা। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই, ২০২৩ দয়াল হরি দাশের ছেলে অজিত কুমার দাশ দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ও.আর. নিজাম রোড শাখায় ৬৩৩ দশমিক ৭৮ টাকা আবাসিক বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেন।
দয়াল হরি দাশের ওয়ারিশগণ অর্থাৎ অজিত কুমার দাশ, প্রদীপ কুমার দাশ, আশীষ কুমার দাশ, শান্তি বালা দাশ’গণ বিবাদী শেখ মুহাম্মদ আরিফের নিকট পূর্ব পাহাড়তলী মৌজার ছয় গন্ডা বা বার শতক জমি দেখাশুনা ও ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করেছেন।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আফলাতুনের সন্তান শেখ মুহাম্মদ আরিফ হলেন সরকারের মিডিয়াভুক্ত দৈনিক চট্টগ্রাম খবর পত্রিকা, নিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল www.ctgkhobor.com এবং দৈনিক ভোরের বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ—বিএসপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। অপর বিবাধী আবু তাহের জমি ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতাকারী।

আদালতের আদেশে এই মামলার তদন্ত করে পিবিআই মামলার অভিযোগের কোনো সত্যতা না পেয়ে—‘অত্র মামলার বাদীনি বিবাদীদের বিরুদ্ধে অন্যায় মূলক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে অপরাধ বিষয়ক মিথ্যা তথ্য উপাত্ত সম্বলিত ঘটনার মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দায়ের করে রাষ্ট্র তথা বিজ্ঞ আদালতের অতি মূল্যবান সময় ও পিবিআই এর মতো বিশেষায়িত একটি তদন্তকারী সংস্থাকে বর্নিত মামলার তদন্তে ব্যস্ত রেখে অন্যান্য তদন্তাধীন মামলাসমূহের তদন্তের মূল্যবান সময় নষ্ট করতঃ পেনাল কোডের ২১১ ধারার অপরাধ করায় প্রকাশ্য আদালতে বিচারের প্রার্থনা জানালাম’ মর্মে আবেদন করেছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।