যেভাবে কাটাবেন শবে বরাত

‘শবে বরাত’ ফারসি ভাষার শব্দ। শব মানে রাত; আর বরাত মানে মুক্তি। কোরআন-হাদিসে ও তাফসিরের গ্রন্থগুলোতে শবে বরাত শব্দটি নেই। তবে ভিন্ন নামে, ভিন্ন শব্দে ও ভিন্ন পরিভাষায় এই রাতের আলোচনা এসেছে।

কোরআনের পরিভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলা হয়। হাদিসের ভাষায় বলা হয়- ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ১৫ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন।

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘এমন পাঁচটি রাত রয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সেই রাতগুলো হলো, জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, দুই ঈদের রাত।’

আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে দোয়া বেশি বেশি পড়া-
رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ
উচ্চারণ: রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন। (সুরা নামল: আয়াত ১৯)

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَ ضَلَعِ الدَّيْنِ وَ غَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজালি। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُبِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُبِكَ مِن اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَ اَعُوْذُبِكَ مِن فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আজাবিল কাবরি। (বুখারি ও মিশকাত)

বেশি বেশি তওবাহ ও ইসতেগফার করা

বান্দার গোনাহ মাফে তাওবাহ করার বিকল্প নেই। বান্দা নিজের গোনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে তা থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।

হাদিসে এসেছে- হজরত ওসমান ইবনে আবিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শাবান মাসের ১৫তম রাতে আল্লাহ তাআলা এই বলে ডাকতে থাকেন, তোমাদের মাঝে কেউ কি আছে ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি তোমাদের মাঝে কিছু চাইবার মতো কেউ? আমি তার সব চাহিদা পূরণ করে দেব।

গোনাহ থেকে ফিরে আসতে তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْم
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِىْ دِيْنِى وَ دُنْيَاىَ وَ اَهْلِىْ وَ مَالِىْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনিয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি। (আবু দাউদ, মিশকাত)

বেশি বেশি তাসবিহ পড়া
سُبْحَانَ الله – اَلْحَمْدُ لِلَّهِ – اَللهُ اَكْبَرُ – لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ سَيْئٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহ (৩৩ বার), আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার), আল্লাহু আকবার (৩৩ বার/৩৪ বার), লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির (১ বার)

سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ – سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণ: সুবহানিাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি; সুবহানাল্লাহিল আজিম।

শবে বরাতে যেসব কাজ করবেন না

লক্ষণীয় যে, এক শ্রেণির যুবক আছে— তারা এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, আতশবাজি,পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে অযথা ঘোরাফেরা করা অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। গর্হিত ও অশ্লীল কোনো কাজ করা যাবে না।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।