রাজশাহীতেও হবে চবির ভর্তি পরীক্ষা

প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বাইরে প্রথমে শুধু ঢাকা বিভাগে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এবার রাজশাহী বিভাগেও পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিভাগের কেন্দ্র হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ও রাজশাহী বিভাগের কেন্দ্র হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

চবি উপাচার্য শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। সভা শেষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ রাজশাহী বিভাগে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো বিভাগ পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিনস কমিটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী মার্চের ২ তারিখ এ ইউনিটের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে চবির ভর্তি পরীক্ষা। পরে ৮ মার্চ বি- ইউনিট, ৯ মার্চ সি- ইউনিট এবং ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে ডি- ইউনিটের পরীক্ষা। বি-১ উপ- ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে ৩ মার্চ ও ডি-১ হবে ৪ মার্চ। বি -১ এর ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১২, ১৩ ও ১৪ মার্চ এবং ডি-১ এর ব্যবহারিক হবে ১০ ও ১১ মার্চ।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় আবেদন ফি ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর আবেদন ফি ছিলো ৮৫০ টাকা সাথে অনলাইনের জন্য কাটা হতো ১০০ টাকা। এবার আবেদন ফি ধরা হয়েছে ৯০০ টাকা এবং অনলাইন ফি বাবদ ১০০ টাকা। আগামী ৪ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। যা চলবে ১৮ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এবং অনলাইনে ফি জমা দেওয়া যাবে ২০ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।

‘সি’ ইউনিটের পরিবর্তন

এদিকে এবার চবির ‘সি’ ইউনিটের আসন বরাদ্দে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২০, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২৫৬ ও মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ৩২ আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগে এই ইউনিটের পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৪০, গণিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ ও আইসিটিতে ১৫ নম্বর ছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইংরেজিতে ৪০, বিশ্লেষণ দক্ষতায় ৩০ ও সমস্যা সমাধান (প্রবলেম সলভিং) অংশে ৩০ থাকবে। সব বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবেন।

ভর্তি কমিটির কো-অর্ডিনেটর ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীর বলেন, নতুন মানবণ্টনে আমরা ৩টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। সেগুলো হলো- ফান্ডামেন্টাল কমিউনিকেশন স্কিল, এনালিটিক্যাল স্কিল এবং প্রবলেম সলভিং স্কিল। আমরা চাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ টেস্টগুলোর মধ্য দিয়ে পরিচালনা করতে। এ তিনটি স্কিলে আমরা যদি শিক্ষার্থীদের যাচাই করতে পারি, তাহলে আমরা মনে করি তারা বিজনেজ গ্র্যাজুয়েট হয়ে দেশ ও দেশের বাইরে স্টেকহোল্ডার হিসেবে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন র‌্যাংকিংয়ের প্রশ্ন আসে তখন দেখা হয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান কোথায়। এখন আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের যখন ভাইভা নিই, তখন দেখি তাদের শিক্ষার অবস্থা বিগত ১০-১৫ বছরের তুলনায় খুবই নিম্নমুখী।

এ মানবণ্টনে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে কি-না এবং এটি শিক্ষার্থীদের জন্য কম সময় কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কম সময় না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনোরকম সমস্যা হবে না। কারণ আমরা যেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার একটা দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা একটা কমিটি গঠন করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এ কমিটিকে আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই একটি মডেল/গাইডলাইন রিপোর্ট দিতে বলেছি। যাতে অ্যানালাইটিক্যাল স্কিল বলতে কি বোঝায়? এর আওতায় কি ধরনের প্রশ্ন হতে পারে? তার একটি বিস্তারিত থাকবে। প্রতিবছর মৌলিক ইংরেজিতে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। এবার আমরা সেটা ৪০ করেছি। সুতরাং আমাদের নতুন মানবণ্টনে যেটা যোগ হয়েছে সেটা হলো প্রবলেম সলভিং স্কিল।

আবেদন যোগ্যতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষ (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের যোগ্যতায় ‘এ’ ও ‘বি’ ইউনিটে কমেছে। পরিবর্তন করা হয়েছে ‘সি’ ইউনিটের (ব্যবসায় অনুষদ) সিলেবাসেও। এছাড়া সুযোগ থাকছে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করতে যত জিপিএ লাগবে:
‘এ’ ইউনিট: এই ইউনিটের অধীনে বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ এবং সমুদ্রবিজ্ঞান ও মৎসবিদ্যা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ- ৮ দশমিক ২৫ এবং মাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ- ৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ- ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে।

‘বি’ ইউনিট: এই ইউনিটের অধীনে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ- ৭ দশমিক ৫ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ- ৩ দশমিক ৫; মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের মোট জিপিএ- ৭ এবং প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩ অর্জন করতে হবে।

‘সি’ ইউনিট: এই ইউনিটের অধীনে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৮.০০ এবং প্রতিটিতে আলাদাভাবে জিপিএ-৩ দশমিক ৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে৷

‘ডি’ ইউনিট: ‘ডি’ ইউনিটের অধীনে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ ও জীববিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগের (আংশিক) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিটে আবেদনের যোগ্যতা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বনিম্ন দুটি মোট জিপিএ-৭ দশমিক ৫০ এবং প্রতিটিতে নূন্যতম জিপিএ- ৩ দশমিক ৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে৷

আরও পড়ুন

চবির ভর্তিযুদ্ধ: প্রতি আসনে লড়বে ৪১ জন

দেশের প্রথম অত্যাধুনিক সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র চবিতে

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।