শঙ্খ নদীর বুকে ড্রেজার, ভাঙনের কবলে শতকোটি টাকার বেড়িবাঁধ

ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে জব্দ বালু যাচ্ছে নিলামে

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কোথাও নেই কোনো বৈধ বালুমহাল। তারপরও শঙ্খ নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর তলদেশের কাঠামো তছনছ করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। লাভজনক হওয়ায় এ অশুভ তৎপরতা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। শঙ্খ নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের খুব কাছ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে শ্রমিক লীগ নেতা আব্বাসের নেতৃত্বে স্থানীয় কিছু লোক বালু তুলছেন। এভাবে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের গোদারপাড়া এলাকাটি।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাত-দিন শঙ্খ নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের পাশে বালু বেচা-কেনার হাট বসেছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার বালু কেনা-বেচা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানাতেও থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের কারণে হুমকির মুখে নদী রক্ষা বাঁধ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ গফুর ও শ্রমিক লীগ নেতা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট।
বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করলেও অবাধে বালু উত্তোলন করে চলছে তারা। দিনরাত ড্রেজার বসিয়ে শঙ্খ নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশ ও নির্মিত বেঁড়িবাধ এখন হুমকির মুখে।

এছাড়া আব্বাসের ড্রেজারে চলছে রায়পুর ইউনিয়নের বাইন্নের দিঘিপাড়, গোদারপাড়সহ কয়েকটি এলাকায় বালু উত্তোলন। তাছাড়া ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে মানুষের ভিটেবাড়ি ভরাটের কাজও করেন আব্বাস।

অভিযোগ উঠেছে, দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় দিনের পর দিন নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছে। তারা মোটা অংকের কমিশন নিয়ে এই বালুর ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। কিন্তু এতে অনেকটাই নির্বিকার প্রশাসন। নামমাত্র অভিযান চালিয়ে কিছু শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জেল জরিমানা করা হলেও, মুল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শুধু আব্বাস নই, বালু উত্তোলনে জড়িত রয়েছে ইউপি সদস্যসহ প্রভাবশালীরা। এতে একদিকে শতকোটি টাকার বেড়িবাঁধ যেমন ভাঙনের মুখে পড়ছে, অন্যদিকে বিপদজনক হয়ে পড়ছে চলাচলের গ্রামীণ সড়ক ও পরিবেশ।

আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু জব্দ করা হয়েছে। এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বালু উত্তোলনকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নেতৃত্বে অভিযানে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু জব্দ করা হয়েছে।যারা অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবেশ ও নির্মিত বেড়িবাঁধের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।