শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী-চাটখিল উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসন। পরপর তিন বার আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করলেও এই এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ যেন নিজ দলের সংসদ সদস্য আর প্রশাসন! রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এই এলাকায় সংগঠনের জন্য অনেক নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াতের হাতে মার খেয়েছেন। অতীতে কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ হাত-পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু নিজেরা ক্ষমতায় থাকলেও এখানকার আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় অনেক নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে অসংখ্য মিথ্যা হয়ারানিমূলক মামলা। মিথ্যা এবং হয়রানির মামলায় আসামি হয়ে ভোগ করছেন কারাদণ্ড, হয়েছেন ঘরছাড়া। অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষত চিহ্ন! আর এসবের জন্য ভুক্তভোগীদের অভিযোগের তীর স্থানীয় সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিমের দিকে। নেতাকর্মীরা বলছেন এই সাংসদ দলীয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের ক্যাডার বাহিনী তৈরি করতে জামায়াত-বিএনপিকে দিয়ে এসব মামলা করিয়েছেন। প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এসব মামলায় ভুক্তভোগী আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রাম খবরের টিম সোনাইমুড়ী যায় সরেজমিনে। কথা হয় মাঠ কাঁপানো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। তারা জানান—সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীরা মামলার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
এতে দেখা যায় সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল উদ্দিনের নামে মামলা আছে ৫টি। ৫টির বাদীই স্থানীয় বিএনপি নেতারা। উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভী আহাম্মেদের নামে ৪টি মামলা।
রিজভীর মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়—জিআর মামলা নং ২০২৫/১৯ মামলাটির বাদী সোনাইমুড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোতাহার হোসেন মানিক। জিআর মামলা নং ২৩৫৬/১৯ মামলাটির বাদি সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার শ্যালকের স্ত্রী খোদেজা আক্তার বিনতু। জিআর মামলা নং ২৩১৯/১৯ মামলাটির বাদি সোনাইমুড়ী পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন সেপু। জিআর মামলা নং ২৩২০/১৯ মামলাটির বাদী সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মোস্তাফিজের শ্যালক নাজমুল হাসান রিয়াজ।

রিজভী আহাম্মেদের আরেক সহযোদ্ধা সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য হাফিজ উদ্দিন ৭টি মামলার আসামি। ছাত্রলীগের সোনাইমুড়ী উপজেলা কমিটির অপর যুগ্ম সম্পাদক আরিফ হোসেন ৪ মামলার আসামি। সমান সংখ্যক মামলার আসামি সোনাইমুড়ী পৌর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাফি, যুবলীগের সদস্য ইমরান। অর্ধ ডজন মামলার জালে আটকে আছে সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য আরমান হোসেন, জহির নামে আছে ৩টি মামলা। সমান সংখ্যক মামলার আসামি সোনাইমুড়ী পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবু সায়েম, সোনাইমুড়ী পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলমের নামেও।

উপজেলার ২নং নদনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী স্বপন পাঠানের নামে আছে ৫টি মামলা। এভাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ফেঁসে আছে মামলার জালে। ৭নং বজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরীর নামে দুইটি, একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নুর হোসেন সোহাগের নামে দুটি, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মারুফের নামে একটি মামলা রয়েছে।
বাদ যায়নি জেলা ছাত্রলীগ, কলেজ ছাত্রলীগ এমনকি কলেজের বর্ষ কমিটি ছাত্রলীগের নেতারাও। জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম জুয়েলের নামে দুইটি, সোনাইমুড়ী সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সজীবের নামে দুটি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ হোসেনের নামে একটি, কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও ২য় বর্ষের সভাপতি ফয়েজের নামে একটি মামলা রয়েছে।

এভাবে সোনাইমুড়ী পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. ইব্রাহীমের নামে দুটি, পৌর ছাত্রলীগের ৪নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শিবুল নামে তিনটি, সহ-সভাপতি শিমুলের নামে তিনটি, ইমনের নামে দুটি, ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি জহিরের নামে দুইটি, পৌর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজনের নামে দুইটি, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াতের নামে তিনটি, সহ-সম্পাদক ইমরানের নামে দুটি, ফয়েজের নামে একটি, সদস্য রায়হানের নামে একটি, সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সম্রাট হোসেন বাদলের নামে দুটি মামলা রয়েছে।
সোনাইমুড়ী পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদ্দামের নামে দুটি, জয়াগ ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আবু তাহের রাজুর নামে একটি, আবদুর রহমানের নামে একটি, সোহেলের নামে একটি এবং সোনাইমুড়ী পৌর যুবলীগ সদস্য জুয়েল ও সুমন একটি করে মামলার আসামি।
পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপনের নামে ২টি, পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ জনির ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রিজুর নামে ২টি মামলা রয়েছে।

ভুক্তভোগী নেতারা যা বললেন (বক্তব্যের ভিডিও লিংকসহ)—
সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সুজন, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য।
শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 1

তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে রশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯৬ সালে ৭নং বজরা ইউনিয়ন বৃহত্তর ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯৮ সালে সোনাইমুড়ী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ২০০৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছি।
২০১৮ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের পূর্বে সোনাইমুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশে একটি বর্ধিত সভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের একটি প্যানেল কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেই বর্ধিত সভায় খন্দকার রুহুল আমিন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং নিজামুদ্দিন সুজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং সোনাইমুড়ী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুবনা মরিয়ম সুবর্ণাকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে একটি প্যানেল কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় সংগঠন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রদান করেন খন্দকার রুহুল আমিনকে। ভাইস চেয়ারম্যান উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও শুধুমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন নিশ্চিত করলেও এমপি এইচ এম ইব্রাহিম তার ব্যক্তিগত লোক আসাদুজ্জামান রিপনকে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নির্দেশ দেন। এবং এমপি নিজেই প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েন। কিন্তু প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে ওই নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই। এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে উনি সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড থেকে আমাকে দূরে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন।
আমাদের বাড়িতে প্রায় ২০টি পরিবারের বসবাস, টিউবওয়েল পানি আর্সেনিক যুক্ত। পানি জগে নেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে লাল হয়ে যায়। আমার গর্ভধারিনী মা আমাকে বাড়িতে একটি ডিপ টিউবওয়েল বসাতে বলেন যাতে প্রতিবেশীদের পানি সমস্যা দূর হয়। সরকার থেকে যে গভীর নলকূপগুলো দেয়া হয় সেখান থেকে একটি নলকূপের জন্য তৎকালীন ইউএনও টিনা পাল ম্যাডামকে অনুরোধ করি। উনি তালিকায় আমাদের বাড়ির নাম যুক্ত করে তৎকালীন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আবুলায়েস সাহেবকে নির্দেশ দেন।
অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়ে আমাদের বর্তমান এমপি এইচ এম ইব্রাহিম টিউবওয়েলের তালিকা থেকে আমার বাড়ির নাম কেটে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে তালিকা থেকে আমার বাড়ির নাম কাটার ব্যবস্থা করেন। আজো আমি মায়ের সেই আবদার টুকু পূরণ করতে পারি নাই।
এভাবে পুরো উপজেলায় যারা যারা আমার নির্বাচনে সময় দিয়েছে, পরিশ্রম করেছে তাদেরকে সরকারের উন্নয়ন বঞ্ছিত করেছেই বিভিন্ন প্রকার মামলা হামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে আসছেন আমাদের এমপি এইচ এম ইব্রাহিম সাহেব।

আবু সায়েম, ১৯৯৫ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন শেষে সোনাইমুড়ী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা যুবলীগের সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
মামলার হয়রানি নিয়ে তিনি বলেন, এলাকার সাংসদ আমাদের আর মেয়র নির্বাচিত হয় বিএনপির! এর কারণ হলো বিএনপি জামায়াতকে আমাদের সাংসদ ইব্রাহিম সাহেব আশ্রয় দেন। বিএনপির নেতাদের দিয়ে আমিসহ আমাদের ছাত্রলীগের শ্যামল-রিজভীসহ অসংখ্য নেতার নামে মামলা দিয়েছেন। আমরা নির্যাতিত, আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু মামলা দিয়েই শেষ নয়, মাত্র এক মাসের মাথায় মামলার চার্জশিট দিয়ে আমাদের হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 2

কেন এমন করা হয় জানতে চাইলে আবু সায়েম বলেন, স্থানীয় এমপি এইচএম ইব্রাহিম সাহেব চান ‘তার লীগ’করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো দাম নেই এমপি সাহেবের কাছে। তিনি বিএনপি—জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হাতে নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের মামলা এবং সার্বিক পরিস্থিতি লিখিতভাবে জমা দিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তাক্ষেপ কামনা করেছেন দলের এই ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আবু সায়েমের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

আবু মোহাম্মদ মহসিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ১নং জয়াগ ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক। তিনি ১৯৯৩ সালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। সেই থেকে এখনো দলের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে। তার সেই দক্ষতাই কাল হলো। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপির শাসনামলের পাঁচ বছরে পাঁচটি মাসও ঘরে থাকতে পারিনি। এরপর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো তখন ভেবেছিলাম শান্তি আসবে জীবনে। কিন্তু জীবন এখন আরো দুর্বিষহ! আমি জয়াগ বাজারের ইজারাদার। বাজারে একজন ছাগল বিক্রি করতে নিয়েছেন চুরি করে। চোর ধরার পর তাকে লোকজন গণপিটুনি দিয়েছে। মামলার আসামি হয়েছি আমিসহ আমার দলের নেতাকর্মীরা! আমার নামে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দিয়েছে বিএনপি নেতারা। মামলা নিয়ে থানায় যোগাযোগ করলে থানা থেকে জানালো উপরের নির্দেশ! উপরের নির্দেশ মানেই হলো এমপি সাহেবের ইশারায় আমাদের নামে মামলা হয়েছে।
শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 3

মহসিন আরো বলেন- সাদেক হোসেন খোকা যখন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন তখন কানুনগো মোহাম্মদ আলী মানিক মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে বিভিন্ন মার্কেটের দোকান ইজারা দেয়। তার চাকরি চলে যায়। তার নামে দুদকে মামলা হয় ২০০ কোটি টাকার। চাকরি যাওয়ার পর সেই অবৈধ টাকা নিয়ে এলাকায় অবস্থা নেয় মানিক। এমপি সাহেবের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে আমার দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করে। অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছে মানিকের প্রভাবে।
আরেকটি ঘটনা বলি—মাহবুব ছাত্রলীগ থেকে উঠে এসেছে। ওর নামে ২১টি মিথ্যা মামলা রয়েছে। ছেলেটি সিগারেটও খায় না। তাকে ক্রস ফায়ার দেওয়ার জন্য এসপি সাহেবের নেতৃত্বে পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ করেছে। পুলিশ যাওয়ার আগে আমি বিষয়টা জেনে যাই এবং তাকে সরে যেতে বলি। না হয় সেদিনই তাকে ক্রসফায়ার দেওয়া হতো।
মহসিন বলেন, ২০০৮ সালে পুরো সোনাইমুড়ীতে তিনি আমার ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্র ছাড়া কোনো কেন্দ্রে জিততে পারেননি। ২০১৪ সালে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর তিনি বেপরোয়া। এমপি সাহেব দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবর্তে বিএনপি জামায়াতকে অগ্রাধিকার দেন। আমার ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নুর উল্লাহকে তিনি দলের কাউন্সিলর বানিয়েছেন।
এমপি সাহেব পুরো এলাকায় তিনি জনবিচ্ছিন্ন। হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসতেন, বাড়ি থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকা যেতেন। এলাকায় যখন আরও কয়েকজন নেতা দলের হাল ধরছে তখন তার টনক নড়েছে। তিনি বাড়িতে বসে উঠান বৈঠক করেন। উঠান বৈঠকে দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশি উপস্থিত থাকেন সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগীরা। মেম্বার-চৌকিদারদের দিয়ে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের বলান—এমপি সাহেবের প্রোগ্রামে না গেলে কার্ড বাতিল হয়ে যাবে।
এমন জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় আসনটি নিশ্চিত হারাবে আওয়ামী লীগ, যোগ করেন মোহাম্মদ মহসিন।
আবু মোহাম্মদ মহসিনের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

সোনাইমুড়ী পৌরসভা যুবলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, রাজনীতির মাঠ ফুলশয্যা নয়, অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা করেই রাজনীতি করতে হয়। সোনাইমুড়ী আওয়ামী পরিবারের সেই ঐতিহ্য আছে। বিএনপির দুর্গ এই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে সাহস লাগে। যুগ যুগ ধরে আমরা বিএনপির হাতে নির্যাতিত। কিন্তু আমরা কখনও চিন্তা করিনি নিজ দলীয় লোকের রোষানলে পড়ব। আমাদের বর্তমান এমপি সাহেব, যাকে নির্বাচিত করতে আমরাই দিন-রাত কাজ করেছি তিনি নির্বাচিত হয়ে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, বিএনপিকে মদদ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা-নির্যাতন করেছেন।
শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 4

২০১৯ সালে আমি ব্যবসায়িক কাজে সিলেটে গিয়েছিলাম। আমাদের এখানকার মেয়র প্রার্থী সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সায়েমের ওপর কিছু লোকজন অতর্কিত হমলা করে। যারা হামলা করে তারা দলের কেউ না। তারা যে ছাত্রদল-যুবদল করতো তা স্পষ্ট ছিলো। হামলার পর তারাই আবার আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ৩টি মামলা দায়ের করে। একই রাতে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩টি মামলা দেওয়া হয়। একটি থানার ওসি সাহেব বাদী হন, আর দুইটার মধ্যে একটি মামলার বাদী ছিলেন পৌরসভা যুবদলে যুগ্ম আহ্বায়ক, আরেকটি দোকানের ভুয়া ম্যানেজার সেজে আমাদের নামে মামলা দেওয়া হয়।
আমি মামলার বিষয়ে ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করি যে, আমি তো সিলেট ছিলাম। আমার নামে কিভাবে এই মামলা হয়? ওসি সাহেব বলেন, খোরশেদ, কি বলবো, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তোমরা বুঝ না? আমরা তো বলতে পারি না। আমরা চাকরি করি, তোমরা তো বুঝো!
আমি আবার ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করি আপনি কার ক্ষমতাবলে জামায়াত-বিএনপির মামলা আমাদের নামে দিলেন? ওসি সাহেব বলেন, তোমরা এমপি সাহেবকে বলো। আমরা তো এমপি সাহেবের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারি না!
এই যুবলীগ নেতা বলেন, বাজারে সাধারণ কোন সমস্যা হলে, রিকশাওয়ালা বা অন্য কারও সাথে কারো ঝামেলা হলে—সেটাকে আমাদের এমপি সাহেব রাজনৈতিক বিষয় বানিয়ে থানায় নিয়ে যান। তারপর ফোনে বলে দেন, মামলা দিতে। আর থানায় কোন তদন্ত ছাড়াই এসব মামলা রেকর্ড করা হয়। দীর্ঘদিন আমরা এভাবে প্রতিহিংসার শিকার। আমার নামে এভাবে ৯টি মামলা হয়েছে। এগুলো আমাদের এমপি এইচএম ইব্রাহিম সাহেবের উপহার। উনাকে আমরা বিজয়ী করেছি আর উনি উপহার হিসেবে এই মামলা দিয়েছেন! এমন মানুষকে জনগণ আর চায় না, আমরা নেতাকর্মীরাও তাকে চাই না। আমাদের এই আসনে তার থেকে যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। আমরা চাই নেত্রী যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করে মনোনয়ন দিক। তা না হলে আগামীতে এখানে নৌকাকে জয়ী করা কঠিন হয়ে পড়বে। খোরশেদ আলমের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যুবলীগের জয়াগ ইউনিয়ন সভাপতি প্রার্থী মাহবুব। তার অভিযোগ—একটা পক্ষ তার পারিবারিক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছে দীর্ঘদিন। না পেরে এলাকায় গুন্ডা মানিক হিসেবে খ্যাত (দুদকের মামলার আসামি মোহাম্মদ আলী মানিক) এক ব্যক্তির নেতৃত্বে এলাকার চেয়ারম্যান শওকত আকবর পলাশসহ এক দেড়শ লোক নিয়ে আমাদের জায়গায় স্থাপনা ভাঙচুর করে, লুটপাট করে। আমরা থানায় ফোন করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে জিডি নিয়েছে। সেটি আর অগ্রসর হয়নি। ওসি বলতো তদন্ত চলছে।
এরপর শুরু হলো আমার নামে মামলা দায়ের। এভাবে একে একে ২১টা মামলা হয়েছে। এর মধ্য একটা মামলা হয়েছে অগ্নি সংযোগের। আর সেদিন আমি ছিলাম ঢাকায়। উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার সাহেবকে দিয়ে তৎকালীন ওসি সামাদ সাহেবকে দিয়ে ফোন করালাম। ওসি সাহেব বললেন, বিষয়টি আমার কাছেও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তদন্ত করে মামলা নেবো। তদন্তের দায়িত্ব যাকে দিয়েছে সেই আইও আমাকে ফোন করে থানায় আসতে বললেন। অপরদিকে মামলা এফআইআর হয়ে গেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল আমাকে থানায় ডেকে গ্রেপ্তার দেখাবে।
শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 5

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। আমরা ওসিকে জিজ্ঞেস করলে ওসি সামাদের একটাই জবাব এমপি সাহেবের ফোন। আবার গুন্ডা মানিকও এলাকায় বলে বেড়ায় তার এক ফোনেই মামলা হয়ে যায়। এভাবে গুন্ডা মানিককে ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের হয়রানির উপর রেখেছে।
এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় নেতারা সাংসদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে বসলে কৌশলে তিনি উত্তর দেয়ার উল্লেখ করে মাহবুব বলেন—এসব ঘটনার বিবরণ দিয়ে আমরা সাংসদের সঙ্গে বসি। বৈঠকে সবার কথা শেষে এমপি সাহেব বলেন—খোদার কসম, আমি জীবনে একটা পিঁপড়াও মারিনি। এমপি সাহেবের কথা সত্য, তিনি পিঁপড়াও মারেননি। নিজের লোক দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি মামলা দিয়েছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমিসহ অনেককে পিটিয়েছেন। আমাকে যে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে সবগুলো কৌশলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে তিনি। আমাদের এলাকার ছিদ্দু পাটোয়ারী সাহেব মারা গেছেন স্ট্রোক করে। তাঁর ছেলেকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোয় তিনি আর নিতে পারছিলেন না। এভাবে এলাকার আওয়ামী পরিবারগুলো ধ্বংসের সব আয়োজন করেছেন সাংসদ এইচএম ইব্রাহিম সাহেব। মো. মাহবুবের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 6
সোনাইমুড়ী পৌরসভা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইউসুফ বলেন, এইচএম ইব্রাহিম সাহেব প্রথম মেয়াদে আমাদের ওপর তেমন চড়াও না হলেও ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে আমাদের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। সব দলে কিছু ভালো কিছু খারাপ লোক থাকে। এমপি সাহেব বেছে বেছে খারাপ লোকগুলোকে সংগঠিত করেছেন। এর পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের লোকদের নিয়ে তিনি একটা বলয় তৈরি করেছেন। উনি চান একক কর্তৃত্ব। যে তার বিরুদ্ধে গিয়েছে তাকে কোন না কোনভাবে হেনস্তা করেছেন। আমার জানা মতে সোনাইমুড়ীর প্রায় হাজার খানেক আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের মামলা-হামলায় তিনি জর্জরিত করেছেন। এমপি সাহেবের রোষানলে কেউ দেশ ছেড়েছেন, কেউ রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আছেন আবার কেউ কেউ মামলার বোঝা বইতে বইতে এক প্রকার শেষ। উনার জন্য আমাদের উপজেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল আজ চূর্ণ-বিচূর্ণ। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি তাদের জন্য এমন সাংসদ হুমকিস্বরূপ। সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এইচ এম ইব্রাহিম থেকে মুক্তি আমাদেরকে মুক্তি দিতে হবে। মো. ইউসুফের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 7
সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল উদ্দিন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন—স্থানীয় সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম মামলার বাদীদেরকে আওয়ামী লীগে ভিড়িয়ে পদ-পদবী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজ দলীয় ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। দলে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু এইচএম ইব্রাহিম মহোদয়ের প্রতিহিংসার শিকার আমরা, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। আমি ছাত্রলীগের রানিং সেক্রেটারি, ইব্রাহিম ভাইয়ের উপহার দেয়া পাঁচটি মামলা বয়ে বেড়াচ্ছি। দুটি চাঁদাবাজির মামলা, একটি নারী নির্যাতন মামলা আরেকটি বিএনপি নেতা মানিক ভাইয়ের দায়ের করা মামলা। মাননীয় সাংসদ ইব্রাহিম ভাইয়ের মদদে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। সবগুলোই মিথ্যা মামলা, উদ্দেশ্য একটাই- আমাদেরকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া।
তিনি আরও বলেন, আমরা ছাত্রলীগ করি। আওয়ামী লীগ আমাদের অভিভাবক। এখানে সাংসদ ইব্রাহিম সাহেব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম ভাই, খন্দকার সাহেব কিংবা একটিভ জাহাঙ্গীর সাহেব সবাই আমাদের অভিভাবক। কিন্তু সাংসদ আমাদের দমিয়ে রাখতে চান! তিনি বিএনপি জামায়াতকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। উনি এখানে জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। শ্যামলের উদ্দিনের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

শতাধিক মামলার জালে চাটখিল-সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের পদধারী ত্যাগী নেতাকর্মীরা 8
রিজভী আহাম্মেদ, ২০০৮ সালে সোনাইমুড়ী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন। কলেজ ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী থেকে তিনি কলেজ শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। রিজভী এখন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই এইচএম ইব্রাহিম সাহেবের জন্য আমরা কাজ করেছি। যেহেতু দল উনাকে নৌকার টিকিট দিয়েছেন আমরা নৌকার জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। ২০১৮ সালে তিনি এমপি হওয়ার পরেই ২০১৯ সালের শুরুতে আমাদের নামে মামলা দেয়া শুরু করেন। দলের স্বার্থে বিএনপি নেতা ও তৎকালীন পৌর মেয়র মোতাহের হোসেন মানিকের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়। মানিক থানায় মামলা করতে গেলে দলীয় অনেকেই থানায় ফোন করেন। তখন পুলিশ মামলা নেয়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় এমপি এইচএম ইব্রাহিম থানায় ফোন করলে আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়। এভাবে একে একে আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়। এমপি সাহেব মূলতঃ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ভালো থাকুক সেটা চান না। তাই দলের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীদের তিনি মামলার জালে ফাঁসিয়েছেন। রিজভী আহাম্মেদের বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

যার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের এত অভিযোগ সেই সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম চট্টগ্রাম খবরকে প্রথমে মামলার বিষয়টি জানেন না বলে জানান। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপনকে স্মারক লিপি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করলে সাংসদ ইব্রাহিম বলেন—এখানে মাদকের মামলা আছে, মারামারির মামলা আছে রাজনৈতিক মামলা নয়। পাঁচ লাখ মানুষের নামে মামলা হলে তো আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবার নামে মামলা থাকবে।
নেতাদের পদবী উল্লেখ করলে তিনি বলেন—স্বেচ্ছাসেবক লীগের সায়েমদের সঙ্গে মেয়রের গণ্ডগোল হয়েছে, মামলা রেকর্ড হয়েছে। এখানে আমার কী করার আছে?
‘সাংসদের রোষানলে পড়ে মামলার শিকার’ হয়েছেন নেতাকর্মীদের এমন দাবির বিষয়ে এইচ এম ইব্রাহিম বলেন—সামনে নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই অনেক কথা বলবে, অনেক অভিযোগ আসবে। এসব অভিযোগ কতটুকু সত্য সেটাই বিষয়। আমার সঙ্গে নেতাকর্মীদের কোনো বিরোধ নেই।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।