সোনাইমুড়ীতে টিআর-কাবিটা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকার (কাবিটা) বিপরীতে নামে-বেনামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগেরই এক- চতুর্থাংশের কাজ হয়নি। আর কিছু কিছু প্রকল্প আছে কাগজে-কলমে।
জানা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রাস্তাঘাট, শিক্ষা ও ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানে মাটি ভরাট এবং সংস্কার, ক্লাব-সংগঠন, বাজারে সোলার প্যানেল স্থাপনবাবদ প্রকল্প দেখিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা লাখ লাখ টাকা লুট হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজ শেষ হয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোকে নতুন করে টিআর-কাবিটার বিশেষ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের ২৩ মার্চ তালিকায় আটটি প্রকল্পে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পের মধ্যে ফতেহপুর মান্নান ডিসি মসজিদের কবরস্থানের মাটি ভরাট ও গাইড ওয়াল নির্মাণে ২ লাখ টাকা, ঘোষকামতা জামাল উদ্দিন জমাদার বাড়ির রাস্তা ও মেডিকেল সড়কের মাটি ভরাটে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও প্রকল্পগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে টিআর ৮৬ প্রকল্পে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সোনাইমুড়ী উপজেলা অফিসার্স ক্লাব সংস্কারে ১ লাখ টাকা, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের আসবাবপত্র ও আইপিএস করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আমিশাপাড়া ঈদগাঁও আমিনবাজার স্পোর্টিং ক্লাবের আসবাবপত্র ক্রয়ে ৫০ হাজার টাকা, ধানুপুর একতা সংঘ ক্লাব সংস্কার ও খেলাধুলা সামগ্রী ক্রয়ে ৫০ হাজার টাকা, ঈদগাঁও আমিনবাজার টয়লেট নির্মাণে ২ লাখ টাকা, আমিশাপাড়া সামসুল হক মেম্বারের পুরাতন বাড়ির রাস্তার সোলিংয়ে ৩ লাখ টাকা, জয় বঙ্গবন্ধু ভিলেজ জলাশয় ভরাটে প্রথম ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, তৃতীয় ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, চতুর্থ ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পঞ্চম ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ষষ্ঠ ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সপ্তম ধাপে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, পূর্ব চাঁদপুর হাজি রফিক মিয়ার বাড়ির পুকুরের পূর্ব পাশের গাইভ ওয়াল নির্মাণ ৩ লাখ টাকা, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কালুয়াই গ্রামের হাবিব সরদারবাড়ির রাস্তার সোলিংয়ে ৭০ হাজার টাকার প্রকল্পের সরেজমিন গিয়ে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর বাকি প্রকল্পগুলোর শতভাগ কাজ শেষ দেখিয়ে কোটি টাকা গায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের বরাদ্দের খবর সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানেন না। প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশের নেই অস্তিত্ব। আর যেসব প্রকল্প করা হয়েছে তা নামে মাত্র।

৮ নম্বর ওয়ার্ড কালুয়াই গ্রামের হাবিব সরদারবাড়ির রাস্তার সোলিং প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা আক্তার পারুল বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে আপনাদের জানাব।

ঈদগাঁও আমিনবাজার টয়লেট নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি মোস্তফা মিয়া জানান, তিনি প্রকল্পের টাকা স্বাক্ষর করে তুলেছেন, তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি। পরে তিনি নির্মাণ কাজ করাবেন।

সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পলাশ সমাদ্দার জানান, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দু-এক প্রকল্পে সমস্যা থাকলেও অন্যান্য প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসমাইল হোসেনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে লিখিতভাবে টিআর-কাবিটার তথ্য চাইতে প্রথমে তিনি তথ্য সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে সাংবাদিকদের চাপে তিনি তথ্য দিয়ে বলেন, ‘কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হয়নি।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।