চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চট্টগ্রামে ফুল উৎসব শুরু হয়েছে। ‘ফুলের মতো আপনি ফুটাও গান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজন করা এ ফুল উৎসব বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো তোফায়েল ইসলাম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ১৯৪ একর জমি মাদকের আকড়া থেকে ফুল বাগানে রূপান্তর করায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রশংসা করে বলেন—যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ফুল উৎসবের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। সামনের প্রজন্মের জন্য আমাদেরকেই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য জেলা প্রশাসকগণকেও এই ধরনের আয়োজন করার জন্য উদাত্ত আহ্ববান জানান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন—অবৈধ দখল, মাদক অভয়ারণ্যকে ফুলের বাগিচা বানানো হয়েছে। পর্যটনকে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এই উদ্যোগ যেন ক্ষণিকের উদ্যোগ না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেই আহবান রেথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। এছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের জন্য হাউজিং ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন—পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ও জঙ্গিবাদকে সমূলে নির্মূল করতে এই ধরনের কালচারাল আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও ভূমিদস্যুদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না। জায়গা ক্রমান্বয়ে উদ্ধার করে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন—প্রধানমন্ত্রী ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬ টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রসংগত এটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ফুল উৎসব। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়া সহ নানা প্রজাতির দেশী- বিদেশী ১২৭ প্রজাতির কয়েক লক্ষ ফুলের সমারোহে ইতোমধ্যে সেজেছে ডিসি পার্ক। দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস থেকে আনা বাল্ব থেকে জেলা প্রশাসনের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাচ হাজার টিউলিপ। এসকল ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রজাতির ফুলের পাশ্বেই লেখা রয়েছে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত। মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরো আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেল্ফি জোন।
এ উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শনী। চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০ টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিনোদন প্রেমীদের জন্য আছে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্ণার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল সহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যাবস্থা থাকবে। শিশু- কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, সীসঅ, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইন সহ থাকবে নানা আয়োজন।
পুরো ফুল উৎসবকে ঝাকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সমন্বয়ে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন, ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে জেলা প্রশাসন ১৯৪ দশমিক ১৩ একর খাস জায়গা অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জায়গায় মাত্র একমাসের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ দিন ব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসব এর আয়োজন করা হয়। সে সময় ১২২ প্রজাতির ফুলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছিলো ফুল উৎসব ২০২৩। দশদিন ব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমন করেন ডিসি পার্ক। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এমন অনুপ্রেরণা থেকেই প্রতিবছর এ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।