স্বামীর জমানো টাকা আনতে গিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর হাতে খুন

খুলছে মোহছেনা হত্যার জট

ভাগ্যবদলাতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন কক্সবাজারের মোহম্মদ তৈয়ব। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় মালয়েশিয়াতেই মারা যান তিনি।

তৈয়বের মৃত্যুতে প্রবাসীরা পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন। তার নিজের জমানো টাকার সাথে প্রবাসীদের দানের টাকা মিলে ছিল প্রায় আট লাখ। প্রবাসীরা সেই টাকা তুলে দিয়েছিলেন চকরিয়ার আরেক প্রবাসী ও তৈয়বের রুমমেট রিদুয়ানের হাতে।

রিদুয়ান বিদেশ গিয়েছিলেন স্ত্রীর যৌতুকের টাকায়। বিদেশ গিয়ে সেই স্ত্রীকে দিয়েছেন তালাক। তারপর প্রেম হয় তার আরেক নারীর সাথে। দেশে এসে তাকে ঘরে তুলেন। এদিকে তৈয়বের পরিবারের সাথেও সখ্যতা গড়ে ওঠে।

গত বছরের মাঝামাঝি তৈয়বের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করে রিদুয়ান। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে খবর আসে রিদুয়ানের হাতে তৈয়বের জমানো এবং প্রবাসীদের অনুদানের টাকা আছে আট লাখ।

সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে গত ২৪ জানুয়ারি দুপুরে মোহছেনাকে চকরিয়া ডেকে নেয় রিদুয়ান। পরদিন সকালে পেকুয়া সদরের নুইন্যামুইন্যা ব্রিজ সংলগ্ন বিলে স্থানীয় কৃষকরা এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ মোহছেনার লাশ উদ্ধার করে। তার বাম হাত ও দুই পায়ের রগকাটা ছিল। পেটেও ছিল ছুরিকাঘাত। অদূরেই ছিল তাকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি। তার ব্যবহৃত মোবাইল, ভ্যানিটি ব্যাগও পড়ে ছিল পাশে। নিহত মোহছেনা কক্সবাজার পৌরসভার খাজা মঞ্জিল এলাকার ছাবের আহমদের মেয়ে।

তার প্রতিবেশীরা জানান, মোহছেনার স্বামী মালেশিয়ায় থাকতেন এবং গত বছর তিনি সেখানেই মারা যান। রিদুয়ানের সাথে তার মালেশিয়ায় পরিচয় হয় এবং সুসম্পর্ক ছিল। ৭ মাস আগে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে রিদুয়ানের সাথে মোহছেনার বিয়ে হয়েছে। মোহছেনা রিদুয়ানের বাড়িতে কখনো থাকেনি। রিদুয়ান মোহছেনাকে ভরণপোষণের খরচ দিতেন এবং কক্সবাজার সদরের তার বাসায় এসে থাকতেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, বুধবার ভোররাতে পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে মোহছেনার দ্বিতীয় স্বামী রিদুয়ান ও তার সহযোগী সুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মোবাইল রেকর্ড ও একটি খালি স্ট্যাম্পও হাতে এসেছে পুলিশের।

তাদেরকে বিস্তারিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান ওসি মোহাম্মদ আলী।

মোহছেনার দ্বিতীয় স্বামী রিদুয়ান সিকদার হৃদয় চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ কোনাখালীর আবদুল হাকিম গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে। ২৪ জানুয়ারী এলাকার আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে দফা দফা বৈঠক করতে দেখেছেন এলাকাবাসী।

সেই বৈঠকে রিদুয়ানের ভাগিনা ছাদেরঘোনার কবির হোসেনের ছেলে সুজনও ছিল বলে জানা গেছে। সুজনও এই ঘটনায় তার মামা রিদুয়ানের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।