১০ বছরে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জে জলাবদ্ধতায় ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকা

২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা: সমাধান কী’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই ক্ষতির কথা জানান। নগরীর লালখান বাজার এলাকায় একটি হোটেলে আয়োজিত এই সভায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।

ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, জলাবদ্ধতার সমাধান না হলে জনগণের বিপুল টাকা খরচ করে কী লাভ? সিডিএ বলছে, এটা তাদের কাজ নয়। সিটি করপোরেশনও তা-ই বলছে। এই দুই সংস্থার ঝগড়ার কারণে ব্যবসায়ীরা হতাশ।
জলাবদ্ধতায় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছদগঞ্জে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, তাহলে এবার সারা চট্টগ্রামের কত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব বের করতে হবে।

বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই সিডিএর তৎকালীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী চেয়ারম্যানের আমলে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। জোড়াতালির মাধ্যমে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। আসলে জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নে এই সংস্থার সক্ষমতাও ছিল না। যোগ্যতা অর্জনের আগেই সিডিএকে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এখন সরকারের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে চট্টগ্রামের মানুষকে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প কেন সিডিএর কাছে এল? কেন সিটি করপোরেশনের কাছে নেই? তৎকালীন মেয়রের (আ জ ম নাছির উদ্দীন) কিছু মন্তব্যের কারণে হয়তো আমলাতন্ত্র বা অন্য কেউ বিরাগভাজন হয়েছেন, নাকি সিডিএ তার কর্মদক্ষতার গুণে এ কাজ পেয়েছে—সেটা জানা নেই।

চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আয়শা আখতার বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি সরিয়ে ফেলা হয়। এখানেও এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ এ এম হাবিবুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা এক দিনে তৈরি হয়নি। তাই তা এক দিনেও সমাধান হবে না। এই দুর্ভোগ কমাতে তাঁরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ বছর কিছু রেগুলেটর (জোয়ার প্রতিরোধক ফটক) সাময়িকভাবে চালু করা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে তা পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে। সিডিএ ৩৬টি খালের মধ্যে ১৬টির কাজ শেষ করেছে। ১০টির কাজ শেষের পথে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এগুলো সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন একটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার এসব প্রকল্পের আওতায় ছয় বছরে খরচ হয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। তারপরও এ বছরের সাত মাসে শহর ডুবেছে ১০ বার।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরের অনেক বড় একটা সমস্যা। মানুষ অনেক ক্ষুব্ধ। এই দুর্ভোগ থেকে মানুষ মুক্তি চান।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে পাহাড় কাটা বন্ধ, জলাধার পুনরুদ্ধার ও নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

বৈঠকে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম দাশ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।