৮ জাহাজেই বিএসসির নিট লাভ ৭২ কোটি টাকা

মাত্র আটটি জাহাজ নিয়েই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ২০২০-২১ অর্থ বছরে নিট লাভ করেছে ৭২ কোটি ২ লাখ টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। সময়ের সাথে তাল মেলাতে বিএসসির বহরে কমপক্ষে ৪০ জাহাজ থাকা উচিত বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বিএসসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিএসসির ৪৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। এজিএম উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযুষ দত্ত, নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব মুজম্মদ আশরাফ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আশরাফুল আমিন, মহাব্যবস্থাপক (ওয়ার্কশপ, বীমা ও দাবি) মো. আহসান উল করিম, মহাব্যবস্থাপক মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আজমগীর, ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার, ক্যাপ্টেন আমীর মো. আবু সুফিয়ান, ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান, মঈন উদ্দিন আহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ।

বিএসসির এমডি কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিএসসির মোট আয় ৩২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা আয় ২৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অন্যান্য খাতে আয় ৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরিচালনা ব্যয় ১৬০ কোটি ২২ লাখ, প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় ৬৭ কোটি ৫ লাখ। মোট ব্যয় ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নিট মুনাফা ৭২ কোটি ০২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের বছর কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা ছিল ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

এবার শেয়ারহোল্ডারদের নিট লাভ থেকে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।

সরকারের সক্রিয় সহায়তা ও দিকনির্দেশনায় বিএসসি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাবার পালা। নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জাহাজ সংগ্রহ ও সেগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। বিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে দেশের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরন ও সাইজের ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা উচিত। বিভিন্ন প্রতিকূল কারণে বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় সে পরিমাণ জাহাজ করপোরেশনের বহরে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী এবং ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বমানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ আনুষঙ্গিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তিনটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লা পরিবহনে নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন গড়ে তোলার জন্য ৮০ হাজার টনের ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিএসসি।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হবে। সব ক্রুড অয়েল বিএসসি’র নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ১ লাখ থেকে সোয়া ১ লাখ টন ধারণক্ষমতার ২টি নতুন মাদার ট্যাংকার ক্রয় সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়নাধীন ২টি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্প সম্পন্ন হলে আমদানি করা ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ২টি ৮০ হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার সংগ্রহের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল অয়েল এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টন জেট ফুয়েল আমদানি করে। তারা বিদেশি জাহাজের মাধ্যমেই তা পরিবহন করে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে দেশের সব সরকারি সংস্থার আমদানি পণ্য বিএসসির মাধ্যমে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।