‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ কথা বলায় চবির ডিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

গণমাধ্যমে চবি উপাচার্যের সমালোচনা, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরার জের ধরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে।

গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিটি ডিনের কাছে পাঠানো হয়। তবে ছুটিতে থাকায় ডিন মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) চিঠি হাতে পেয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ০৪ অক্টোবর তারিখে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আপনাকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। পুরো কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অনিয়ম হচ্ছে” প্রমাণ ছাড়া ঢালাওভাবে এই ধরনের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী এবং উপাচার্যের মানহানিরও শামিল। আপনার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে আগামী ০৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আদিষ্ট হয়ে আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান বলেন, “ঢালাওভাবে প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য ভিত্তিহীন। এ মন্তব্যর যথাযথ প্রমাণ ও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ছুটিতে থাকায় আজ চিঠি হাতে পেয়েছি। আমি চিঠির উত্তর দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ”

তিনি আরও বলেন, “যে উপাচার্য সাড়ে তিন বছর ধরে সিন্ডিকেট নির্বাচন দেন না, তিনি কি আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন? পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, সেগুলো কী পত্র-পত্রিকায় ছাপানো হয়নি? এত দিন তিনি যা করেছেন তাতে কি ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে? তিনি উচ্চ কণ্ঠে চিৎকার করে সভা পরিচালনা করলে এতে কি কারও মান ক্ষুণ্ন হয়নি? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এতই ঠুনকো নয় যে, কেউ চেঁচামেচি করলে, তার প্রতিবাদ করলে যে তা ক্ষুণ্ন হবে।”

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের এ ডিন বলেন, “এই ধরণের চিঠি আইনের শাসনের অন্তরায়। আইনের শাসনে শ্রদ্ধাশীল হলে কেউ এই ধরনের চিঠি লিখতে পারেন না। আমি সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এইভাবে চিঠি দিয়ে কাউকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা কোনো অন্যায় ও আইন পরিপন্থী কাজকে আর প্রশ্রয় দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যিনি পরিচালনা করবেন, তাঁকে আইনের শাসনের মধ্যেই চলতে হবে।”

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। ১৬ সদস্যের এ পর্ষদের ৮ পদই খালি। আর মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্য আছেন আরও দু’জন। সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির পদে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর। দুই বছর পর পর এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে এ নির্বাচন হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির নির্বাচন চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ৮ অনুষদের ডিন। কিন্তু চিঠি দেওয়ার ২২ দিন পরও নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এক সভায় এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে জানতে চান ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী। এ সময় উপাচার্য তার চেয়ার ছেড়ে উঠে ডিনকে শাসাতে থাকেন এবং নির্বাচন দেবেন না বলে জানান। আর এই নিয়ে দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।