কর্ণফুলী নদীতে চিনির পোড়া বর্জ্য না ফেলার নির্দেশ জেলা প্রশাসনের

গলিত চিনির রাসায়নিক তরল কর্ণফুলী নদীতে না ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশনা দেন তিনি।

জেলা প্রশাসক বলেন, উনাদের (কারখানা কর্তৃপক্ষ) প্রতি পরিবেশ অধিদফতর, কলকারখানা পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার, বিএসটিআইসহ আরও বিভিন্ন সংস্থা সবাই মিলে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। নির্দেশনাটা হচ্ছে, এখানে কারখানা থেকে চিনির যে তরল নদীতে গিয়ে পড়ছে, সেটা যেন আর না পড়ে। এটা আমরা আর কোনোভাবে অ্যালাউ করব না। কারখানার পাশেই প্রচুর জায়গা আছে। এখানে গভীর গর্ত করে বর্জ্যগুলো স্টোর করে রাখা যাবে।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে কারখানার পোড়া বর্জ্য কারখানার ভেতরেই গভীর গর্ত করে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব বর্জ্য নদীতে পড়লে বিভিন্ন জলজ প্রাণী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে এক্ষুণি ব্যবস্থা নিতে বলছি। এখন থেকে নদীতে যেন কারখানার কোন তরল পানি না পড়ে।

এদিকে চিনিকল থেকে কর্ণফুলী নদীতে নির্গত বর্জ্যে শুধু মাছসহ জলজ প্রাণী নয়, প্রায় ৬০০ প্রজাতির জলজ-স্থলজ উদ্ভিদও হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিনিকলের আগুনে সাম্প্রতিক ভয়াবহ দূষণের পর বৃহস্পতিবার ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি টিম কর্ণফুলী নদীর দূষণ কবলিত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নদীর তীরে শনাক্ত করা ৬০০ প্রজাতির উদ্ভিদই হুমকির মুখে পড়বে।

প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আরও বলেন, অপরিশোধিত চিনির কাঁচামাল পুড়েছে। এটির প্রভাব বাজারে পড়বে না। গোডাউন কিংবা অন্যান্য কারখানায়ও পর্যাপ্ত চিনির মজুদ রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন। রমজানের বাজারে দাম বৃদ্ধির মতো ক্রেতাদের আশঙ্কা পাওয়ার মতো কোন হুমকি নেই।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমানের নেতৃত্বে গঠন করা ৯ সদস্য, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযুষ কুমার চৌধুরী, কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা? (ওসি) মো. জহির হোসেন, চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আবদুল মালেক, চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক, এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলস লিমিটেডের ডিজিএম মো. রফিকুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ পৌনে ৪টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগর এলাকায় আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার আগুন লাগে। সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট সেখানে কাজ করছে। বৃহস্পতিবার সকালে গুদামের ভেতর থেকে কিছু কিছু ধোঁয়া বের হওয়ার দৃশ্য দেখা গেলেও আগুন আর দেখা যাচ্ছে না। ফায়ার কর্মীরা জানিয়েছেন, আগুন প্রায় নিভে এসেছে। তবে গুদামের ভেতরে ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে আগুন দেখা যাচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।