জব্বারের বলীখেলা ঘিরে নগরীতে উৎসবের আমেজ

চট্টগ্রামে চলছে শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা। এই খেলায় অংশ নিতে এবং উপভোগ করতে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন শত শত মানুষ। বলীখেলা ছাড়াও ৩ দিনের বৈশাখী মেলায় নগরীতে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর লালদিঘী মাঠে শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই খেলার ১১৫তম আসর।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বলীখেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

সরজমিনে দেখা গেছে, বলীখেলা এবং বৈশাখী মেলা ঘিরে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমিয়েছেন শত শত মানুষ। বাড়তি ভিড়ে রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কম হলেও ঐতিহ্যবাহী এই খেলা উপভোগের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউ। আর তাইতো পায়ে হেটে হলেও গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন অনেকে।

বেলা ৪টা থেকে শুরু হয় আসল লড়াই। খেলার মাঠে একে এক নামতে থাকেন প্রতিযোগী। তমুল লড়াইয়ে চলতে থাকে কুস্তি খেলা, বাহুতে বাহুতে লড়াই! অপরদিকে দর্শনার্থীরাও কড়তালি ও বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন চারদিক। এছাড়া মেলার বিভিন্ন দোকানেও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। যদিও তীব্র গরম দর্শনার্থী কমিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুস্তাফিজুর রহমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসেছেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। তিনি বলেন, চারদিকে প্রচণ্ড গরম, এর পরেও মেয়ে বায়না করায় বলীখেলা দেখতে এসেছি। গরম না হলে হয়তো আরও ভালো লাগতো। মেলায় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জিনিস উঠেছে। পুরাতন এসব জিনিসপত্র মেয়েকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। এছাড়া কিছু কেনাকাটাও করেছি।

জব্বারের বলীখেলা ঘিরে নগরীতে উৎসবের আমেজ 1
বৈশাখী মেলা। ছবি:সংগৃহীত।

জয়নাল, মাহির, রিফাত—রাজশাহীর তিন বন্ধু পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক বছর ধরে চট্টগ্রামের এীতহ্যবাহী এই বলীখেলার কথা শুনে এসেছেন। এতদিন কৌতুহল ছিলো আর তাই আজ ছুটে এসেছেন জব্বারের বলীখেলা দেখতে। তারা বলেন, ঘুরে ঘুরে পুরো মেলা দেখেছি, অনেক ছবি তুলেছি। বেশ চমৎকার লড়াই হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ আসলেই অনেক উৎসবপ্রিয়। তা নাহলে এই রোদে এত ভিড়!

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কুস্তিকে বলীখেলা নামে ডাকা হয়। বলীখেলাকে ঘিরে লালদিঘী মাঠের আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকে বৈশাখীমেলার আয়োজন। ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর প্রতিযোগিতাটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে।

জব্বারের বলীখেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলীখেলা। ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদিঘী মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন ব্যবসায়ী জব্বার সওদাগর।

ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।

লোকসাহিত্যের ইতিহাসে দেখা যায়, বাংলাদেশে বলীখেলা শুধু চাটগাঁইয়াদের। চট্টগ্রামের নিজস্ব সংস্কৃতিও বটে। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। বলী শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো শক্তিশালী বা পরাক্রমশালী লোক, বীরপুরুষ, শক্তসামর্থ্য। অর্থ শুনে বোঝা যায়, বলীখেলা মানে শক্তিশালীর মল্লযুদ্ধ বা কুস্তি প্রতিযোগিতা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।