অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে সারা দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সর্বশেষ রোববার (৪ জুন) দুপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি বিদ্যুৎ অফিসের নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ—সিএমপির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সরাদেশে অব্যাহত লোডশেডিংয়েরা কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শনা আমরা পেয়েছি। সেই আলোকে থানাগুলোকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ক্রাইসিসটা জাতীয়। সেটি যাতে ভিন্নখাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে তার আগাম ব্যবস্থা হিসেবে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করছি।
সিএমপির আরেক কর্মকর্তা জানান, দুপুর ১টার পর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে সারা দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি বিদ্যুৎ অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। আমরা সেই আলোকে সমন্বয় করে ফোর্স মোতায়েন করছি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, সদর দপ্তরের কোনো নির্দেশনা এখনো আমি দেখিনি। তবে যেহেতু বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে আমরা এসপি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নজরদারীতে রেখেছি। পুলিশের কাজই হলো সরকারী সম্পদ, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান। সেই আলোকে আমরা স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।
কয়লা সংকটে গত ২৫ মে দেশের বৃহত্তম ও সর্বাধুনিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়েছিল। কয়লার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় অবশিষ্ট ইউনিটও বন্ধ হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান মেলেনি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হলে জাতীয় গ্রিডে অন্তত ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিতে পারে বলে খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন—মূল্যস্ফীতি আর লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গ্যাস-তেল-কয়লা সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়াতে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও কেনা যাচ্ছে না। আমি জানি এই গরমে মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে এখন বিদ্যুৎ নেই—এই দুটি কষ্ট আমার দেশের মানুষ পাচ্ছে।
রোববার (৪ জুন) সকালে তিনি এ কথা বলেন।
একই দিন দেশের চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কত দ্রুত কয়লা নিয়ে আসা যায়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও অর্ধেক সক্ষমতায় চলছে। দ্রুত সমাধানে বিদ্যুৎ বিভাগ চেষ্টা করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও সোনাগাজীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে চড়াও হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।