মিতু হত্যা—পিবিআইয়ের চার্জশিট গ্রহণ, বাবুল পাচ্ছেন ডিভিশন

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মিতু হত্যা মামলায় পিবিআই-এর দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাবুলের আইনজীবীদের দেওয়া নারাজি ও পুনঃতদন্ত আবেদন খারিজ করলেও তাকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবদুল হালিমের আদালতে শুনানি শেষে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আসামিপক্ষে নারাজি এবং পুনঃতদন্তের আবেদন করা হলেও শুনানি শেষে তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে।

বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের মামলার শুনানিতে সাক্ষীর নারাজি দরখাস্তের সময় নামন্জুর করা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় সংগৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রথম মামলায় ব্যবহার করা বেআইনি- আমাদের এই দরখাস্তের বিষয়ে পড়াশুনা করে সিদ্ধান্ত দিবেন। বাবুল আক্তারকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন-১ মর্যাদা দেয়ার আবেদন মন্জুর করেছেন আদালত। বাবুল আক্তারের সাথে একান্তে ১ ঘন্টা আলোচনা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতের আদেশে অ্যাডভোকেট শিশির মনির, অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদসহ অন্যান্য আইনজীবীরা বাবুল আক্তারের সাথে মামলার বিষয়ে একান্তে কথা বলেছেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলায় আসামিরা হলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুছা ও খায়রুল ইসলাম প্রকাশ কালু। এদের মধ্যে মুছা ও কালু পলাতক রয়েছে বলে দাবী পুলিশের। কিন্তু মুসার স্ত্রীর দাবি তাকে বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল।

২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে। ঘটনার পর তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ প্রথমে বাবুলকে ‘ফেরেস্তা’ আখ্যা দিলেও একটা সময়ের পর থেকে এই হত্যার জন্য তাকে দায়ী করে আসছিলেন।

শুরু থেকে চট্টগ্রাম পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত করে। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটির তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়। সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে বাবুল পিবিআই থেকে মামলার তদন্তভার সরিয়ে অন্য সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। ইতোমধ্যে পিবিআইতেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে তিন বার।

দীর্ঘ তদন্তের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার দাবি করে গত বছরের ১১ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুলকে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পরদিন ১২ মে দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ নিহত মিতুর বাবা। তখন থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে আছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।