রাঙ্গুনিয়ায় তপু হত্যা: ২ বছরের মাথায় মরদেহ উদ্ধারকৃত পুকুর থেকে আলামত উদ্ধার

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার আলোচিত তপু মালাকার (২৪) হত্যার প্রায় ২ বছরের মাথায় হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেইসাথে উন্মোচিত হয়েছে হত্যার রহস্যও। এখন আসামিদের ফাঁসির মাধ্যমে সন্তান হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হবে এমনটাই আশা করছেন নিহতের মা শেলী মালাকার।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বসু মালাকারকে তার দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হলে আলামত খুঁজতে থাকে পিবিআই। পরে যে পুকুরে তপু মালাকারকে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয় সে পুকুরের পানি সেচ দিতে গিয়ে পুকুরের মাঝখান থেকে হত্যায় ব্যবহৃত সেই লাঠি উদ্ধার করা হয়।

আলামত উদ্ধারের পরবর্তী চট্টগ্রামের পিবিআইর পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, দুই মাস আগে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার আমাদের দেওয়া হলে আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। এরপর মামলার সুরতহাল নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে রহস্য খুঁজে বের করি। হত্যায় জড়িত আসামিদের সন্ধান পেলে তাদের খুঁজতে বের হলে তারা বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে চলে যায়। একপর্যায়ে হত্যার সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করতে পারি। একজনকে রাঙ্গুনিয়া ও অন্যজনকে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ৩ জনের মধ্যে দুইজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের মধ্যে একজনকে নিয়ে আজ আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তারা স্বীকার করেছে তপু মালাকারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মৃত দেহটি পুকুর পাড়ে গাছের নিছে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তারা একটা কাঠের বাটাম দিয়ে তপু মালাকারের মাথায় আঘাত করে হত্যা করার পর গাছের বাটামটি পুকুরে ফেলে দেয়। বাটামটি হত্যার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হওয়ায় তা সংগ্রহে আমরা এখানে এসেছি এবং পুকুর সেচ দিয়ে বিকেলের দিকে আসামির দেয়া তথ্য অনুযায়ী আলামতটিও পেতে সক্ষম হয়েছি (কাঠের বাটাম)।

তপুকে কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, আসামিদের সাথে মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত টাকা পয়সার লেনদেন ছিলো বলে জানা যায়। সেটিকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটনো হয়। তাদের তিনজনের মধ্যে হত্যার পরিকল্পনাকারী ছিল জনি মালাকার।

রাঙ্গুনিয়ায় তপু হত্যা: ২ বছরের মাথায় মরদেহ উদ্ধারকৃত পুকুর থেকে আলামত উদ্ধার 1

এদিকে হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়ে তপু মালাকারের মা শেলী মালাকা বলেন, আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তারা। হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে কিনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। এখন আমার মন শান্তি পেয়েছে। আমার ছেলেকে যে লাঠি দিয়ে হত্যা করেছে সেটিও পাওয়া গেছে৷ এবার তাদের ফাঁসির আদেশের অপেক্ষায় রয়েছি। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না করে, কোনো মায়ের বুক যাতে খালি না হয়। তাদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরী করতে হবে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পারুয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার প্রশাসনকে ততটা সহযোগিতা করেছি। আমি চাই এ হত্যার রহস্য উন্মোচন হোক এবং অপরাধীরা শাস্তি পাক। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে লক্ষ্যে আমি এলাকায় মাদকসেবি এবং মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

এর আগে, ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ হন উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের সাহাব্দিনগর এলাকার মালাকার পাড়ার তপু মালাকার । নিখোঁজের পর থেকে পরিবার তাকে খুঁজে না পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরির উপর ভিত্তিত করে তদন্ত নামে পুলিশ। পরে ৫ জানুয়ারি তপু মালাকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মরদেহ উদ্ধারের পর রাঙ্গুনিয়া থানায় পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। অন্য দিকে পরিবারের দাবি তপুকে হত্যা করা হয়েছে বললেও দীর্ঘদিন সেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পরে মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হলেও তারাও রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় সর্বশেষ গত দুইমাস আগে মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় লাশের ক্ষতচিহ্ন দেখে তদন্তে নেমে দীর্ঘ দুই বছরের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বসু কুমার(৩৩), সুবল মালাকার (২৭), বাপ্পা চৌধুরী (৩২) নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় তারা।

গ্রেপ্তার ৩ জনের মধ্যে দুইজন ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার কথা জানালেও হত্যার পরিকল্পনাকারী জনি মালাকার নামের আরেক আসামি ঘটনার পর থেকে বিদেশ পলাতক রয়েছে বলেও জানিয়েছে পিবিআই।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।