স্কুলের জন্য কেনা জমি বেদখলে, আটকে আছে ভবন নির্মাণের কাজ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার খোঁয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জবর দখল করে রেখেছে দাতা সদস্যের পরিবার। স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা নির্মাণ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবৈধ দখল থেকে নানাভাবে উদ্ধারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেও জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের জমি দখলে থাকায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ গেছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বুধবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলেই সড়কে খেলাধুলা করছে। বিদ্যালয়ের দখলকৃত জমিতে টিনের ভেড়া ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছেন জমিদাতার পরিবারের সদস্যরা। সাইনবোর্ডে লেখা মুঠোফোনে নম্বরে একাধিক বার ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। ১৯৬২ সালে স্থানীয় জামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের নামে ১ একর জমি বিক্রি মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু জামাল হোসেনের উত্তরসূরি আবুল কালাম ভূমিদাতা দাবি করে আসলেও কৌশলে এসব জমি নিজের নামে নামজারি করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মিস মামলায় আবুল কালামের নামজারি বাতিল করে দেন ভূমি অফিস।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামিরা পারভিন বলেন, করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ের ৮৫ শতক জমি দখলে নিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে দখলে নেয় স্থানীয় আবুল কালাম। এখন বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়া আর কোনো মাঠ নেই। প্রতিবছর বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার না হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ জানান, ‘বিদ্যালয়ের নামে ১৯৬২ সালে তৎকালীন ডেপুটি কমিশনারের কাছে এলাকার জামাল হোসেন সাফ কবলায় এক একর জমি বিক্রি করেন। তখন থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে খেলাধুলা ও সমাবেশ আয়োজন হতো। ২০১২ সালে বিদ্যালয়ের জন্য ৩টি নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প এলে ওই জামাল হোসেনের পরিবারের বাঁধায় ভবনগুলো ফেরত যায়। এ জমি উদ্ধারের জন্য তখন থেকে অভিভাবক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সদস্যরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেন ভূমিমন্ত্রীসহ তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে।

বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০১০ সাল পর্যন্ত এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা। ২০১০ সালের পর বিদ্যালয় পরিচালনায় নতুন কমিটি এলে এবং বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, মাঠ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে গেলে দাতা পরিবারের পক্ষ থেকে বাধার সম্মুখীন হয়।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন, বিদ্যালয়ের জন্য যারা ভূমি দিয়ে ছিল তাদের উত্তরসূরিরা তাদের নামে কৌশলে ৮০ শতক জমি বিএস খতিয়ানে নামজারি করে নিয়েছিল। এসব নামজারি বাতিল করার পর এ পর্যন্ত আমরা ১০ শতক উদ্ধার করেছি। বাকি জমিও উদ্ধারের কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, জমি না থাকার কারণে তৎকালীন একটি ভবনের বরাদ্দ ফেরত গেছে। ইতিমধ্যে নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ভবন নির্মাণে আর কোনো বাধা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।