চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রাঙ্গণে আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ৩২ বছরের পুরনো ক্ষত। ১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারে শহীদ হন মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. মিজানুর রহমানসহ আরও দু’জন। তিন দশক পার হলেও সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। অবিলম্বে ডা. মিজান হত্যা মামলা পুনরুত্থাপন করে হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তির দাবী তুলেছেন চমেকের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে চমেক কনফারেন্স হলে শহীদ ডা. মিজানুর রহমানের ৩২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে এ দাবী তোলা হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডা. মিজান স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

বক্তারা বলেন, “১৯৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর ছাত্রলীগের তৎকালীন চমেক ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএসের নেতৃত্বে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার হয়নি। বরং খুনিরা আজও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলার আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়েছে, যা ন্যায়বিচারের চরম পরাজয়। যদি ডা. মিজান হত্যার বিচার সময়মতো হতো, তাহলে পরবর্তীতে বিডিএস ছাত্র আবিদের মতো আরও অনেক তরুণ প্রাণ আজ বেঁচে থাকত। সাকিব হোসেন-ওয়াকিলদেরকেও আইসিওতে যেতে হতো না। চমেকের হলগুলো আয়নাঘরে পরিণত হতো না।
বক্তারা ডা. মিজান হত্যাকাণ্ডে জড়িত ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ও ডা. রবিউল করিম ও অন্যান্য আসামীকে পুনরায় আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এবং মামলাটি রি-ওপেন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। একই সাথে সামনে যাতে ক্যাম্পাসে এ ধরণের হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন প্রতিরোধে দল-মত নির্বিশেষে একসাথে কাজ করে ফ্যাসিবাদী-নিষিদ্ধ দলের কারো পুনর্বাসন যাতে না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শহীদ ডা. মিজান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও চমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সেলিম। প্রধান অতিথি ছিলেন বি এম এ চট্টগ্রাম শাখার প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য ডা. এ কে এম ফজলুল হক।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তসলিম উদ্দিন, ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কার্ডিওলজির কনসালটেন্ট ডা. ইফতেখারুল ইসলাম, ৩০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশিষ্ট সার্জন ডা. মো. আবু নাসের, চট্টগ্রাম মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অর্থোপেডিক সার্জন ডা. এটিএম রেজাউল করিম, শহীদ ডা. মিজান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।

বক্তব্য রাখেন ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ, চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ ওয়াই এম এন জাহাঙ্গীর, শিশু মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন ঢালী, ৩২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইফুল আজম সাজ্জাদ, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রেজাউল করিম, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ৩৯তম প্রজন্মের শিক্ষার্থী ডা. ইমরোজ উদ্দিন।
স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৩০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম কামরুল হক। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন চমেক হাসপাতালের কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) হাফেজ ডা. মো. মুজিবুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ও ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট ডা. ইকবাল মাহমুদ এবং ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এস মুস্তাকিম। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।



মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।