ফিলিস্তিনের জন্য ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবসে’ ওয়াশিংটন ও লন্ডনে মানুষের ঢল

গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি র দাবিতে এবং ইসরাইলের প্রতি দুই পরাশক্তি মার্কিন ও বৃটিশ সরকারের সমর্থনের বিরোধিতা করে ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবসের’ অংশ হিসেবে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করেছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ৯৯তম দিনে সংহতি প্রদর্শনে ওয়াশিংটনে জড়ো হওয়া বিশাল জনতার বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ পরেছে এবং জনতা ফিলিস্তিনি পতাকা নেড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করো’ বলে শ্লোগান দেয় এবং তাদের হাতে বহন করা ব্যানার ও পোস্টারে লেখা ছিল ‘মুক্ত প্যালেস্টাইন’ চাই এবং ‘গাজার যুদ্ধ শেষ করো’।

হোয়াইট হাউসের কয়েক ব্লক পরে একটি মঞ্চে, বেশ অনেক ফিলিস্তিনি-আমেরিকান, যারা মূলত গাজার বাসিন্দা কিন্তু এখন মিশিগান থেকে টেক্সাস পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা গাজায় নিহত বা আহত তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের আবেগঘন বিবরণ দিয়েছেন।
তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইসরায়েলের জন্য সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এসময় এক বক্তা বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন সহজেই এই উন্মাদনা বন্ধ করতে পারেন’। এ সময় ব্যাপক করতালি দিয়ে বিক্ষোভকারীরা এই বক্তব্যে সমর্থন জানায়।

৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি ভয়াবহ বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের প্রতিবাদে লন্ডনে সপ্তমবারের মতো শনিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডন বিক্ষোভের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার প্রায় ১৭শ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার অজুহাতে প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় ধ্বংসাত্মক অভিযান শুরু করে।

ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তিন মাসের বেশী সময় ধরে গাজায় নির্বিচার এবং অবিরাম বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এতে অন্তত ২৩ হাজার ৮৪৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বশেষ এই মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে।

মালিহা আহমেদ নামের ২৭ বছর বয়সী স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এএফপিকে বলেছেন,‘আমরা ফিলিস্তিনের জনগণকে দেখাতে চাই যে আমরা তাদের সাথে আছি এবং আমাদের সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলকে যা করছে তা চালিয়ে যেতে দেওয়ার জন্য তারা (ব্রিটিশ সরকার) একটি খুব বড় ভূমিকা পালন করছে এবং এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’

৩৭ বছর বয়সী দীপেশ কোথার নামের অপর মিছিলকারী ব্যক্তি বলেন, ‘বসে বসে বিশ্বকে কিছুই না করতে দেখা খুবই হতাশাজনক। তাই আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং সারা বিশ্বের সরকারের প্রতি আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে বেরিয়ে আসি।’

ইরান-সমর্থিত গ্রুপগুলোর গাজার সাথে সংহতি প্রকাশ করে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলার পর এই সপ্তাহে ইয়েমেনে হুথি ঘাঁটির বিরুদ্ধে মার্কিন ও বৃটিশ বিমান হামলার কারণে শনিবারের বিক্ষোভগুলো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

একটি বৃটিশ সংগঠিত জোটের ডাকা এই ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ দিবসে’ ৩০টি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
এই জোটের অংশ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অভিযানের কেট হাডসন বলেছেন, এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠানটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তি দাবি করছে।’
তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারকে অবশ্যই গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস যুদ্ধের প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে হবে এবং এর যুদ্ধাপরাধের নিন্দায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগ দিতে হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।