ফ্রি-ফায়ার গেম খেলতে গিয়ে বন্ধুর হাতে প্রাণ হারালো আবদুল্লাহ

মোবাইল ফোনে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলা নিয়ে ঝগড়ার জেরে কিশোর আবদুল্লাহকে ঘুসি মারে তারই ১৫ বছর বয়সের অপর এক বন্ধু। ঘুসিটি শ্বাসনালীতে লাগে এবং আবদুল্লাহ ঢলে পড়ে যায়। তার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সেই বন্ধু তার মা হাফিজা বেগমকে জানায়। মা-ছেলে মিলে আবদুল্লাহর লাশ বস্তাবন্দি করে ফেলে দেয়। যা গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার আয়েশার মার গলির দুই ভবনের মধ্যবর্তী স্থান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এই হত্যার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় হাফিজা বেগম (৩৫) ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (পশ্চিম ও বন্দর) উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে আবদুল্লাহকে আরেক কিশোরের সঙ্গে বের হতে দেখা যায়। পরে ওই কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। তাকে ও তার মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, আবদুল্লাহ ও ওই কিশোরের বাসা কাছাকাছি। তারা এক সময় সহপাঠী ছিল। গত বুধবার সকালে তাদের মা-বাবা কর্মস্থলে যাওয়ার পর আবদুল্লাহর বাসায় আসে ওই কিশোর। পরে একসঙ্গে ওই কিশোরের বাসায় যায় আবদুল্লাহ। সেখানে বসে তারা মোবাইলে গেম খেলছিল। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় ওই কিশোর ঘুসি মারলে আবদুল্লাহর কণ্ঠনালিতে লাগে। এতে সে ঢলে পড়ে যায়। কিশোর তার মাথায় পানি ঢালতে থাকে। তবুও কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় কিশোর তার মাকে ফোন করে। মা কর্মস্থল থেকে এসে দেখে আবদুল্লাহ মারা গেছে। তখন তারা লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরও বলেন, লাশ গুম করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই কিশোর আবদুল্লাহর বাবাকে ব্যস্ত রাখতে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করে। হাফিজা বেগমকে শহর থেকে এবং তার ছেলেকে আনোয়ারা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আবদুল্লাহর মা-বাবা চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় কাজ করেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নানাবাড়িতে থেকে একটি মাদ্রাসায় পড়ত আবদুল্লাহ। গত ২৬ নভেম্বর ছুটিতে মা-বাবার কাছে এসেছিল সে। শিশুটিকে না পেয়ে তার বাবা বুধবার রাত ১০টার দিকে সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন। আবদুল্লাহর বাবার অভিযোগ পেয়েই রাতে অভিযানে নামে ইপিজেড থানা পুলিশ। যে নম্বর থেকে টাকা চেয়ে ফোন করা হয়েছিল, সেটি পরে বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার আয়েশার মার গলির হামিদ আলী টেন্ডল রোডের মিনারা ম্যানসন ও আইয়ুব আলীর ভবনের মধ্যবর্তী স্থানে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে আবদুল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধার করে।

সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে আহাজারি করতে করতে শিশুটির মা শাহেদা বেগম বলেন, বুধবার সকালে আমরা কারখানায় চলে যাই। সন্ধ্যায় আমার স্বামীর ফোনে কল দিয়ে একজন বলে আবদুল্লাহকে অপহরণ করেছে। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেয়। ১ ঘণ্টা পর ফোন করে ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়। আমরা বলেছিলাম, আমরা গার্মেন্টসে কাজ করি, এত টাকা কোথা থেকে দিব। ফোনের ওপাশ থেকে বলে, বস বলছে ১ টাকাও কম হবে না। এরপর আমার স্বামী পুলিশের কাছে যান।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।