ভিমরুলের কামড়ে মৃত্যু, ৪ দিন পরেও শোকে কাতর মা

পুত্র শোক বোধহয় একেই বলে! ছেলেকে হারিয়েছেন ৪ দিন হয়ে গেলও, কোনভাবে মানতে রাজি না মা। ছেলে রাজা মিয়া এই পৃথিবীতে নেই সেই শোকে পাগলের মত আচরণ করছেন মা। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে বার বার রাজা বলে ডাকছেন মা! সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকালে রাজার মিয়ার বাড়িতে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। মায়ের এমন কান্না আর আচরণ দেখে হতভম্ব এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনরা।

জানা গেছে, রাজা মিয়ার ২ সন্তান ও বউসহ মোট ৪ জনের ছোট্ট একটি পরিবার। রাজা মিয়া পেশায় একজন দিন মজুর ছিলেন। গ্রামের মানুষের যে কোন কাজ দিন মজুর হিসাবে করতো। পরিবারের সকল দায়িত্ব একাই বহন করতেন। বিভিন্ন এনজিও ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে স্বচ্ছলতার আশায় কিছুদিন আগে ছেলেকে পাঠিয়েছেন প্রবাসে। ঋণের বোঝা নিয়ে পরিশ্রমের মাত্রা আরও বাড়িয়েছেন রাজা মিয়া। তাইতো সেদিনও প্রতিবেশী নুরু মিয়ার গাছ কাটতে দিনমজুর হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন পাশের বাড়িতে। কিন্তু সেই কাজ ছিল রাজা মিয়ার জীবনের শেষ কাজ, কে জানতো!

গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় দিন মজুর রাজা মিয়া (৪০) প্রতিবেশী নুরু মিয়ার গাছ কাটতে যান। গাছ কাটার একপর্যায়ে একটি ডাল অসাবধানতাবশত পাশের অপর একটি গাছে থাকা ভিমরুলের চাকে গিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য ভিমরুল বেরিয়ে এসে রাজা মিয়ার মুখে ও হাতে-পায়ে হুল ফুটিয়ে দেয়। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে দ্রুত গাছ থেকে নামিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তার দুই কানে দুইটি ভিমরুল দেখা গিয়েছিল। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রাজা মিয়া ওই এলাকার এনামুল হকের ছেলে।

এদিকে রাজা মিয়ার পরিবারের অভিযোগ হলো- গাছে ভিমরুল আছে সেটা প্রতিবেশী নুরু মিয়ার বাড়ির লোকজন রাজা মিয়াকে আগে কেন বলেনি। গাছ কাটার জন্য এক প্রকার জোর করে গাছে উঠানো হয়েছে। ঘটনার দিন রাজা মিয়াকে দেখতে বা ৪ দিন পয়র্ন্ত কোন প্রকার সহযোগীতা করেনি প্রতিবেশী নুরু মিয়ার পরিবার (যদিও রাজা মিয়া প্রতিবেশী নুরু মিয়ার গাছ কাটার কাজ নিয়েছিল)। নুরু মিয়ার পরিবারের কারণে আজ একটি পরিবার পথে বসলো এমন বলছেন নিহত রাজার মিয়ার পরিবার।

স্থানীয় ৬৫ বছরের কামাল মিয়া জানান, আমাদের পশ্চিম বেতাগী সিকদার পাড়া এলাকায় একাধিক জায়গায় গাছে গাছে ভিমরুল রয়েছে। যেকোন সময় আবারও রাজা বিয়ের মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বেতাগীর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।