শাহ আলীকে নিজেদের সাবেক সদস্য দাবী করলো আরসা

উখিয়ায় পুলিশের হাতে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়া আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু জুনুনীর ভাই শাহ আলীকে নিজেদের সাবেক সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে আরসা।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে আরসার অফিসিয়াল টুইটার একাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করে তাকে হৃদরোগী ও ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথাটি জানানো হয়।

রাত ১০.৪টায় এক টুইটে বলা হয়-
‘শাহ আলী আরসা’র একজন সাবেক সাধারণ সদস্য, পরীক্ষা-নীরিক্ষায় তার হৃদরোগ ধরা পড়ে এবং ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন মর্মে ধারণা করা হয়েছিল। শারীরিক অক্ষমতার কারণে গত আড়াই বছর আগে সমস্ত দায়িত্ব থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য তিনি অব্যাহতি পেয়েছিলেন ‘

এর পর অপর টুইটে বলা হয়-
‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, শাহ আলী তার চূড়ান্ত অবসরসহ এবং বিদায়ের আদেশ থেকে আরসার’র কোনো কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেনি।’

উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ার ৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৌকার মাঠ এলাকা থেকে তাকে আটক করে আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তারপর তাকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।

প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহ আলী বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) সংগ্রহের বিষয়টি ওঠে আসে। শাহ আলী চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের জয়নব কলোনীর ঠিকানায় এনআইডি সংগ্রহ করেছেন।

এনআইডির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় শাহ আলী নামে একটি এনআইডি লক করা আছে আরও অনেক আগ থেকে। এই শাহ আলী আরসা প্রধানের ভাই কিনা সেটা জানিনা। লক হওয়াতে আমরা সেটা ভেরিফাই করতে পারিনি।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ জানান, শাহ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে তিনটি মামলা সাত দিন করে ২১ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত কোন মামলায় রিমান্ড শুনানি হয়নি।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতনের মুখে নিজের ভূখণ্ড ছেড়ে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের জন্য হাজার হাজার হেক্টর বন উজাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাম্প। রোহিঙ্গাদের জন্য গড়া কুতুপালং ক্যাম্পে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ব্রাশফায়ারে নিহত হন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নেতা মুহিবুল্লাহ।

মুহিবুল্লাহ হত্যায় আরসার হাত আছে বলে রোহিঙ্গা নেতাদের সন্দেহ। যদিও মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে আরসা দায় অস্বীকার করেছে। নিহত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্টদের এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তবে এপিবিএন বিভিন্ন অপরাধে দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে আরসা নামধারী সন্ত্রাসী গ্রুপের ১১৪ সন্ত্রাসী রয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্য জুড়ে আরসা সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে বলে মিয়ানমার সরকারের দাবী। বিশেষত পুলিশের ওপর আরসার হামলার অভিযোগ তুলে তার প্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনী (তাতমাদো) রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস জাতিগত নির্মূল অভিযান পরিচালনা করে। সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে রাখাইন রাজ্য অশান্ত হয়ে উঠে, আর সেখান থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে নির্বাসিত হতে বাধ্য হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।