পবিত্র মাহে রমজানের ২০ দিন চলে গেল। শেষ হলো রহমত ও মাগফিরাতের দশক। আজ থেকে শুরু নাজাত; যা স্থায়ী হবে ৯ বা ১০ দিন। নাজাত মানে মুক্তি। একটানা ২০ দিন সংযম-সাধনার পর রোজাদার এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে যান, যেখানে রয়েছে পরম প্রাপ্তি।
মানুষের জন্য জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি থেকে মুক্তির চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্তির।’ (মিশকাত)
হযরত আয়শা রা. বলেন রাসূলুল্লাহ সা. মাহে রমজানের শেষ দশ দিন ইবাদাতে এত বেশি সাধনা করতেন যা অন্য কোন সময়ে করতেন না। (তিরমিজি, হাদীস নং ৭৪৪)
হযরত আয়শা রা. বলেন, রমজানের শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সা. সারা রাত জাগতেন। নিজের পরিবারবর্গকেও জাগাতেন আর ইবাদাতে প্রচুর সাধনা ও অধিক পরিশ্রম করতেন। (মুসলিম হাদীস নং ২৬৬৩)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, মাহে রমজানের প্রথম রজনীতেই শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাসমুহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এর একটি দরজাও আর খোলা হয় না। বেহেস্তের দরজাসমুহ খুলে দেয়া হয় এবং এর একটি দরজাও আর বন্ধ করা হয় না। এমাসে একজন আহ্বানকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী অগ্রসর হও, আর হে পাপাসক্ত বিরত হও। আর এ মাসে আল্লাহ অজস্র লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এবং প্রতি রাতেই এরূপ হতে থাকে। (তিরমিযী, হাদীস নং ৬৩৪)
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত অন্য হাদীসে মহানবী সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী, হাদীস নং ৬৩৫)
রমজানের শেষ দশকে রয়েছে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল ক্বদর। শুধু এ রাতটির কারণেই এ দশককে অনায়াসে রমজানের রাজমুকুট বলা যায়। কুরআনে মহিমান্বিত এ রজনীর মর্যাদা ও মহাত্ম বর্ণনা করে স্বতন্ত্র একটি সূরাহ অবতীর্ণ হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, শবে ক্বদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ফেরেশতারা এবং রূহ (অর্থাৎ জিবরাঈল আ.) প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হন। সে রাত আদ্যোপান্ত শান্তি- ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরাহ আল ক্বাদর)
এছাড়া এ দশকে ইতিকাফ করার কথা বলা হয়েছে। যদিও বছরের যেকোনো সময় ইতিকাফ করা যায়। তবে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের ফজিলত ভিন্ন। এটা মহানবী সা, এর প্রিয় সুন্নাত।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশকে নবী করীম (সা.) ইতিকাফ করতেন। (বুখারী, হাদীস নং ২৪৯)
রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। মহিমান্বিত এই রাত পাওয়া সহজতর হয় রমজানের শেষ দশকে। ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এই রাতগুলোতে আমরা লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্যে ঘুমানোর আগে ইবাদাত করা উচিত। কদরের রাতে বান্দা যদি তাওবা করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে ইবাদতে মগ্ন থাকে; হাদিসের ভাষ্যমতে, তার পেছনের সব গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন।
রমজানের শেষ দশকে আল্লাহ তায়ালা অধিক পরিমাণে গুনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা তথা নাজাত দেন বলেই মূলত এ দশকের নামকরণ ‘নাজাত’ হয়েছে। এ জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নাজাত পাবার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে; রমজানের শেষ দশকে নাজাতী বান্দার পরিমাণ বেশি থাকে বলেই এ দশকে আমাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং কায়মনো বাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ দশকের মধ্য দিয়েই রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তী এক বছর পূর্বে আর রমজানের দেখা আর আমরা পাইনা। পরবর্তী রমজানে বেঁচে থাকবো কি-না সে নিশ্চয়তাও কারোরই নেই; সব মিলিয়ে রমজানকে বিদায় দেয়ার দিনগুলোতে রমজানের প্রতি এক ধরনের আপ্লুতকর, মর্মস্পর্শী অনুভূতি আমাদের ধর্মবোধে প্রগাঢ় হয়। এ প্রগাঢ় মর্মস্পর্শী অনুভূতির দাবিতেই রমজানকে সর্বোচ্চ একনিষ্ঠতাপূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে বিদায় জানানো উচিত।
এমএফ
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।