মাদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী বগা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় স্বস্তি নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ত্রাসী এই বগা সাতকানিয়া থানার দক্ষিণ চরতী গ্রামের আলী চাঁন বাড়ির মৃত আহমেদ হোসেনের ছেলে।

বগার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শিশু হত্যা, অপহরণ, ইয়াবা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, ইয়াবা মামলার সাজা পরোয়ানা মূলে মো. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ বগাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আজ শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সাইফুল বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ চরতির সাধারণ মানুষ
গেল জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে বগা ও তার সহযোগীরা। গত তিনমাসে সাতকানিয়ার চরতি-আমিলাইশ এলাকায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এই বাহিনী।
থানা পুলিশ জানিয়েছে, এরমধ্যে কমপক্ষে ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেনি। বগা মুলত সাইফুলের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতো।

সন্ত্রাসী সাইফুল কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্য়াক্রম চালিয়ে আসছে। সাইফুলের উত্থান সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর হাত ধরে এবং এলাকায় যাবতীয় অপকর্ম নদভী আশ্রয় দিতেন বলে অভিযোগ আছে। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে নদভীর শ্যালক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সাথে দূরত্ব তৈরি হলে প্রতিপক্ষের শিবিরে আশ্রয় নেয় সাইফুল।

এরমধ্যে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ চরতিতে নৌকার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় তারা। এই সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।
নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিনকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন।

এরপর দক্ষিণ চরতি এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পর থেকে এখনো ঘর ছাড়া নুর মোহাম্মদের পরিবার। এছাড়া চরতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুদ্দিনকে অপহরণ করে মারধর দক্ষিণ চরতির আরাফাত সিকদারকে মারধর করে এই সাইফুল বাহিনী।

নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতি কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথ সভায় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুল ও তার বাহিনী। এই সময় নৌকা সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন।

এর দুই দিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওইদিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুককে বাড়ি-দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে।

নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুর হোসেনকেও মারধর করার অভিযোগ আছে সাইফুল বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যে- সাইফুল ও তার বাহিনী দ্বারা এলাকার মানুষের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

দক্ষিণ চরতি ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আমিন বলেন, আমি ও আমার পরিবার যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। একই দল থেকে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমি ঈগলের পক্ষে নির্বাচন কার্য়াক্রমে অংশ নিলেও আমার ছোট ভাই ইলিয়াছ মেম্বার নৌকার হয়ে কাজ করেন। কিন্তু দফায় দফায় তার উপর হামলা ও দোকান ভাঙচুর এলাকার সম্প্রীতি নষ্ট করছে।

এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতির ১০ পরিবার। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন দীর্ঘ এক বছর নিজেদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্ভাস্তুর মতো দিনযাপন করে। বাড়ি-ভিটে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন উদ্ভাস্তু পরিবারসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন।

সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (বগা)। ইতোমধ্যে একাধিক বার জেলেও গিয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ী।
সাতকানিয়ার পশ্চিম অঞ্চল (চরতি, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া ও নলুয়া) সহ চন্দনাইশের বৈলতলী, আনোয়ারার হাইলধর ও বাঁশখালীর পুকুরিয়া অঞ্চলের অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও তার বাহিনী। এছাড়া রয়েছে খাল ও সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, এই বাহিনীর অন্যদেরও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।