প্রসঙ্গঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাযুজ্য

আজকাল আমরা কথায় কথায় “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” এই শব্দদ্বয় প্রায়ই শুনতে পাই। কিন্তু “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” বলতে আসলে কি বোঝায়? কেউ বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে—হার না মানা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো,কেউ বলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ক্যানভাসটা হল সর্বাগ্রে দেশপ্রেম। দেশের মঙ্গলার্থে নিবেদিতপ্রাণ এবং প্রগতিশীল একটা জাতিই হবে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটা জাতি। এক একজন এক এক রকম কথা বলেন। এর মধ্যে অনেক তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সাংবাদিক ইত্যাদি রয়েছেন।
আমি বিশ্বাস করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে প্রতিটি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা,বৈষম্য ইত্যাদির কারণে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে সংগ্রাম , সেগুলোকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা যায়।

যারা নিজের জন্য নয়, বিনা স্বার্থে দেশের জন্য, সার্বজনীন অধিকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেন না, প্রকৃতপক্ষে তারাই খাঁটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী। আমি বা আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী এটা বলার কোনো বিষয় নয়, এটা হৃদয়ে লালন করার বিষয়, মনে-প্রাণে ধারণ করার বিষয়।
যারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী তারা কখনো মুখে এ কথা বলে না, তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে এটা জানান দেয়। এই চেতনা একটা অনুভূতি থেকে উৎসারিত। এই চেতনা প্রতিনিয়তই আমাদের জাতিসত্তাকে নতুন নতুন আশা ও আকাঙ্ক্ষার বাণী শোনায়। এতে আমরা নতুনভাবে পুনর্জাগরিত হই, বৃদ্ধি পায় আমাদের কর্মস্পৃহা। বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম, সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বলেই ওরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ ফ্রেজটি বা শব্দবন্ধটি হাল আমলে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বা এর অব্যবহিত পর এই শব্দের ব্যবহার কোনো পত্রপত্রিকা, বই, সরকারি নথি বা কোনো দলিলে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কিছু আমাদের চোখে পড়ে নাই। অর্থাৎ শব্দটির ব্যবহার বেশিদিনের নয়।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’–এই ফ্রেজটাকে আমরা যদি একটু ভাবসম্প্রসারণ বা ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে আমরা বুঝতে পারব–মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে সেই সব চেতনার কথা, সেই সব আকাঙ্ক্ষার কথা নির্দেশ করে যার জন্য বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এবং অবশেষে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছেন। অর্থাৎ মানুষের অধিকার লুন্ঠন, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে শোষণ বঞ্চনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

১৯৭০ এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো, বিভিন্ন ভাষ্যসমূহ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ভাষণ যদি আমরা সতর্কচোখে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে আমরা সেখানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের কাঠামো কেমন হবে, সরকার কী কী বিষয় অগ্রগণ্য হিসাবে ব্যবস্থা নেবেন তার পরিস্কার দিকনির্দেশনা আছে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের অধিকার সুরক্ষা করা, সুবিচার, সম্পদের সমবন্টন করা, জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়াসহ মৌলিক বিষয়গুলো যেখানে যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেছেন।

আমি বাংলাদেশের সংবিধানে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’এর সংজ্ঞা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমি স্পেসিপিক কোনো সংজ্ঞা পাইনি। তবে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশটির নাম দেওয়া হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের শাসন করার অধিকারসহ একটি সার্বভৌম ভূমি, যেখানে বাঙালিরা নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা নিয়ে সব ধরনের বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার ভিত্তিতে সৃষ্ট বাংলাদেশের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
প্রথমত, বাংলাদেশ হবে জনগণের দেশ এবং জনগণের দ্বারা পরিচালিত দেশ; অর্থাৎ গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত দেশ।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হবে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত, অন্যায়, অবিচার ও শোষণমুক্ত; অর্থাৎ অসাম্প্রদায়িক সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক দেশ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় এ চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।
সংবিধানের প্রস্তাবনায়ও (তৃতীয় প্যারা) বলা হয়েছে
‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে;’

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে— ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম’। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল স্পিরিটটা এই এক লাইন দ্বারাই প্রকাশ পাচ্ছে।সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা না থাকলেও এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটে ওঠেছে।
সেহেতু আমরা বলতে পারি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চারটি স্তম্ভ আছে:
১) সাম্য: প্রজাতন্ত্রের সবাই সমান বলে গণ্য হবেন
২) মানবিক মর্যাদা: সকল নাগরিককে মানবিক মর্যাদা প্রদান করতে হবে (হিউম্যান রাইটস)
৩) সুবিচার: বিচার ব্যবস্থা মাধ্যমে সুবিচার এর ব্যবস্থা থাকবে
৪) গণতন্ত্র: দেশের জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে।
বিস্তারিত আলোচনার পর নিশ্চই স্পষ্ট হবে যে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনার সাযুজ্যতা বা মিল কোথায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা, সোমবার, অক্টোবর ৮, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত ২০১৮ সনের ৪৬ নং আইন “ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন”- এ “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে:
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” অর্থ যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ;”
অর্থাৎ আমরা একথা নির্দ্বিধায় উচ্চকন্ঠে বলতে পারি, লাখ লাখ মানুষের রক্তস্নাত পথে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম তার পিছনে মূল চারটি আকাঙ্ক্ষা কাজ করেছিল। সেগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গণপরিষদ, ঢাকা, শনিবার, ৪-নভেম্বর-১৯৭২, সকাল ১০-৪০মিনিট-এ প্রদত্ত ভাষণে বলেন:
জনাব স্পিকার সাহেব, এই যে চারটা স্তম্ভের উপর শাসনতন্ত্র রচনা করা হলো, এর মধ্যে জনগণের মৌলিক অধিকার হচ্ছে একটা মূলবিধি।
জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ না হলে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমরা এগিয়ে গিয়েছি।

এই যে জাতীয়তাবাদ, সে সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। ভাষাই বলুন, শিক্ষাই বলুন, সভ্যতাই বলুন, আর কৃষ্টিই বলুন—সকল কিছুর সঙ্গে একটা জিনিস রয়েছে। সেটা হলো অনুভূতি। এই অনুভূতি যদি না থাকে, তাহলে কোন জাতি বড় হতে পারে না। এবং জাতীয়তাবাদ আসতে পারে না। অনেক জাতি দুনিয়ায় আছে, যারা বিভিন্ন ভাষাবলম্বী হয়েও এক-জাতি হয়েছে। অনেক দেশে আছে, একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু নিয়ে বিভিন্ন জাতি গড়ে উঠেছে–তারা এক জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির উপর।
দ্বিতীয় কথা, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে।

আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো, আমার দেশে যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে যে সব provision করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ protection পায়, শোষিতকে রক্ষা করার জন্য এই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হবে।
তৃতীয়ত, socialism বা সমাজতন্ত্র। আমরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি।সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। এক এক দেশ, এক এক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে।আমরা চাই-শোষণহীন সমাজ। আমাদের সমাজতন্ত্রের মানে শোষণহীন সমাজ।

তারপরে আসছে ধর্মনিরপেক্ষতা। জনাব স্পিকার সাহেব, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবও না।
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না।

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করলেও আমরা পাই- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো সেই অনুভূতি – যে অনুভূতি আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে শিখায়,জাতীয়বাদও নির্ভর করে অনুভূতির উপর, অর্থাৎ যে অনুভূতির সাথে চার মূলনীতির সম্পর্ক আছে সেটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

উপরের ব্যাখ্যা থেকে এটাও স্পষ্ট যে, বৈষম্য বিরোধী – ছাত্র আন্দোলনের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাযূজ্য বা মিল আছে। কেননা এই অনুভূতিও ছিলো – শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আন্দোলন, হার না মানার আন্দোলন।
ছাত্র আন্দোলনের যে কী শক্তি সেটা ৫২,৬৬,৬৯ এও প্রমাণিত হয়েছে। যারজন্য সরকার ছাত্রদের দাবীর মুখে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা মামলা করলে হাইকোট কোটার পক্ষে রায় দিলো। সমগ্র দেশ উত্তাল হলো। রাজনীতিবিদদের কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা শিক্ষার্থীদের চেতনায় আগুন ধরিয়ে দিলো। আন্দোলন বেগবান হলো,সেই আন্দোলনকে দমাতে তাদের বুকে গুলি ছোড়া হলো। কিছু প্রাণ অকালে ঝড়ে গেলো।পুলিশ কি জানে না গুলিও রাষ্ট্রীয় সম্পদ,গুলি চালানোরও কিছু নর্মস আছে। সুশীল সমাজ মনে করে পুলিশ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

শিক্ষার্থীদের বুকের তাজা রক্ত দেখে অভিভাবকেরাও ক্ষেপে ওঠলো। ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সকলের বুকে রক্তক্ষরণ হলো। মাঠে নামতে শুরু করলো সবাই।
সেই সুযোগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উপর ভর করলো কিছু দেশদ্রোহী রাজনৈতিক অপশক্তি,স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করলো। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করলো।সাধারণ মানুষের ধারনা – এসব বি এন পি, জামাত- শিবির ও তাদের প্রেতাত্মাদের কাজ।
এর সাথে নিশ্চয়ই আমরা হাইব্রিডদের ব্যাপারটি এত সরল চোখে দেখব না। হাইব্রিডদের প্রসঙ্গেও বলা যায়, তারা স্বার্থান্বেষী, তারা রাতের আঁধারে প্রতিক্রিয়াশীল। আড়ালে তাদের স্বরূপ ভিন্ন। কিন্তু দিনের আলোতে তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করে।

কথায় বলে—কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। সুতরাং হাইব্রিড ও আদর্শ বিসর্জনকারীর দল যতই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মেতে উঠুক না কেন, তাদের স্বরূপ সবার জানা। পেছনের জীবনে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির যে ছাপ হাইব্রিডরা রেখে এসেছে সেটা কোনো না কোনোভাবে বের হয়ে পড়েই। মানুষ চাইলেই তার নেতিবাচক অতীত থেকে মুক্ত হতে পারে না। অতীত তাকে তাড়িত করে ফেরে।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, কেউ যদি প্রতিক্রিয়াশীল চেতনা থেকে সরে এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়, তাকে কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কাতারে প্রবেশের সুযোগ দেয়া উচিত? নাকি তাদের বহিষ্কার করা উচিত? সেটাও এখন সময়ের দাবী।
সে যা হোক, অবশেষে ছাত্রদের দাবীর মুখে,আন্দোলনের মুখে,অনুভূতি থেকে উৎসারিত চেতনার স্ফুলিঙ্গে—একটা যুক্তিসঙ্গত কোটা নির্ধারণ করে বিষয়টা আবার আদালতেই মীমাংসা হলো।

যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জাতি প্রত্যাশা করে, তেমনি বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমেও ছাত্র হত্যার বিচার করা উচিত। অন্যথা আবারও হার না মানা শিক্ষার্থীরা অনায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এই রুখে দাড়ানোর অনুভূতিটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে উৎসারিত হবে। তাই শিক্ষার্থীদের চেতনা বা অনুভূতিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।

অতীত বলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ, ছাত্র জনতা মুক্তিকামী। মুক্তির চেতনা বাস্তবায়নে তারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে, যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে। শিক্ষার্থীরা এখনো সেই অপেক্ষায় আছে। তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি তারাই, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে,বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল যত শিগগির এ বাস্তবতা উপলব্ধি করবে, ততই মঙ্গল তাদের নিজেদের, সঙ্গে দেশ ও জাতির।

লেখক—গবেষক ও কথাসাহিত্যিক

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।