মিরসরাইয়ে মাদকের ভয়ঙ্কর ছোবল, পুলিশের জালে চুনোপুঁটি–অধরা গডফাদাররা
দুই থানায় এক বছরে আটক ২৩০ মাদক কারবারী
দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর সারাদেশে মাদক কারবারিদের ধরতে জোরালো অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক উদ্ধার থেকে শুরু করে মাদক কারবারিদের আটক নিয়ে পুলিশ যেমন প্রশংসিত, তেমনি মাদকের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকা নিয়েও সমালোচিত।
গত এক বছরে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুই থানায় (মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ) থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে নারী-পুরুষ মিলে ২৩০ জন মাদক কারবারি আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে রাঘববোয়ালরা। আবার অনেক সময় আইনের দূর্বলতার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় ব্যবসা শুরু করে।
গত ২৫ মে মাদক কারবারিদের ইন্দনে বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ডাকাত আখ্যা দিয়ে র্যাবের উপর হামলা ঘটনা ঘটেছে। এতে র্যাবের দুই সদস্যসহ ৩জন আহত হয়।
মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, মে ২০২১ থেকে ২০২২ এর মে পর্যন্ত গত এক বছরে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হুইসকি, গাঁজা, চোলাই মদ এবং আইসসহ নানান নেশাদ্রব্য নিয়ে ১ শত ৬৭টি মামলায় ২৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মাঝে জোরারগঞ্জ থানা ৮৭ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১১৯ জন এবং মিরসরাই থানায় ৮০ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১১১ জন।
জোরারগঞ্জ থানায় ৬০ হাজার ২ শত ৩১ পিস ইয়াবা, ৩শ ২৬ বোতল ফেন্সিডিল, ৫৪ বোতল হুসকি, ১১৯ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ৪৯৭ লিটার চোলাই মদ ও ৯৫ গ্রাম আইস আটক করা হয়েছে। অন্যদিকে মিরসরাই থানায় গত এক বছরে ৬০ হাজার ৮শ’ ১৪ পিস ইয়াবা, ১৯৬ কেজি ৯শ’ ৫০ গ্রাম গাঁজা, ৯শ’ ৫৬ লিটার চোলাই মদ, ৯ লিটার বিদেশি মদ এবং ১ হাজার ৮১ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন সময় বিপুল মাদক উদ্ধার এবং বিক্রেতা আটক হলেও যুব সমাজের হাতে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে অনায়াসেন। মাদক সেবন থেকে রক্ষা করা যাচ্ছেনা কিছুতেই। মাদক সেবনের ফলে যুবকেরা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়াচ্ছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, মিরসরাইয়ে গত এক বছরে এত শত গ্রেফতার হলেও মাদকের মূল গডফাদাররা পর্দার আড়ালে থেকে যায়। যার কারণে সমাজ থেকে মাদক বন্ধ হচ্ছে না।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন জানান, তিনি দায়িত্ব প্রাপ্তের পর মিরসরাই থানায় মাত্র তিন মাসেই অসংখ্য মাদকসহ কারবারিদের আটক করা হয়েছে। যা বিগত সময় কম ছিলো। আশাকরি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
জোরারগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর হোসেন মামুন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যেই জোরারগঞ্জ থানা কাজ করে যাচ্ছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) লাবিব আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম খবরকে জানান, ২০২০ সালে মিরসরাইয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে মাদক এবং মাদক কারবারিকে আটকের সংখ্যা বেড়েছে। শুরু থেকে আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।
এসময় তিনি জোরারগঞ্জ ও মিরসরাই থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত দুই ওসির মাদকের বিরুদ্ধে ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন, তবে মাদক কারবারীরা বিভিন্ন সময় অভিযানের তথ্য আগেই পেয়ে যাওয়ার ফলে অভিযান ব্যর্থ হয়। এবিষয়ে সামনে আমরা আরো সতর্কতা অবলম্বন করবো।
পুলিশের অভিযানে মাদকের খুচরা বিক্রেতা ও মাদকসেবী আটক হলেও মাদকের কোনো গড ফাদার পুলিশের অভিযানে আটক না হওয়া মিরসরাইবাসীর মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এলাকার সচেতন মহলের দাবী খুচরা বিক্রেতা এবং মাদকসেবীর মতো মাদকের গডফাদারদেরও যেন আইনের আওতায় আনা হয়।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।