আওয়ামী লীগ নেতাকে খুঁটিতে বেঁধে মারধরের মূলহোতা ইন্দ্রজিৎ এখনও অধরা

পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নে ইফতার মাহফিলের ব্যানারে নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে মারধরের ঘটনায় এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে সাবেক ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান বিএম জসিমের ডান হাত ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী লিও।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএম জসিম, তার ছেলে মুশফিক উদ্দিন ওয়াসি ও আইয়ুবকে গ্রেপ্তার করা হলেও ঘটনার সময় প্রথমে জিতেনের উপর তেড়ে এসে কিল ঘুসি মারা ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী লিওকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের দাবী- হন্য হয়ে খুঁজছেন তারা।

সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবী, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিল শুরুর আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক মাহফুজুল হক হাফেজ অনুষ্ঠানের মঞ্চে টাঙানো ব্যানারটি খুলে নিলে আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহ প্রতিবাদ করেন। এসময় ইন্দ্রজিৎ লিও দালাল দালাল বলে জিতেনকে কিল ঘুসি মারতে থাকেন। এর পরপরই জিতেনকে মারধর করে গাছের সাথে বেঁধে রাখেন।

জিতেন কান্তি গুহের ওপর হামলার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম জুলু ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. ফয়সাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাদের উপর কেন হামলা হয়নি তা নিয়ে ও প্রশ্ন উঠেছে।

তারা বলছেন, ঘটনার বিরোধের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে? মেম্বার টিটু দে ও ইন্দ্রজিতের গুরু কে? তাদের গ্রুপিংয়ে কারা আশ্রয় দেয়? জিতেনের উপর ইন্দ্রজিতের এত রাগ কেন? তাকে বেঁধে রাখার ছবি যে বা যারা ভাইরাল করেছে সৎ উদ্দেশ্যে করেনি তাদের বিষয়েও তদন্তের দাবী আওয়ামী লীগ নেতাদের।

পটিয়া উপজেলার ১৭ইউনিয়নে কোথাও আওয়ামী লীগের ব্যানারে ইফতার মাহফিল হয়নি, হাইদগাঁও ইউনিয়নে দুবার কেন ইফতার মাহফিল হল। ইউনিয়ন পরিষদে ইফতারের অনুষ্ঠানের পর কার ইন্ধনে আবার ইফতার আয়োজন তা বের করা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্যদিকে জিতেন কান্তি গুহের ঘটনায় পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রির্পোট হাতে পাওয়ার পর সাংগঠনিক ভাবে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

হাইদগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম জুলু জানান, জিতেন গুহকে প্রথমে ঘুষি মারে ইন্দ্রজিৎ লিও। পরে চেয়ারম্যান বিএম জসিমের নির্দেশে তার দলের লোকজন জিতেন গুহকে মারধর করে। এসময় বাধা দিলে আমার উপরও ক্ষিপ্ত হয় তারা।

অপর দিকে জিতেন কান্তি গুহর ওপর বর্বোরচিত হামলার প্রতিবাদে গত (১ মে) পটিয়া থানার মোড়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা শাখা। এতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত প্রধান অতিথি ছিলেন।

পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম জানান, ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী লিওকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল শুক্রবার হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের ব্যানারে গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ও স্বতন্ত্র নির্বাচিত চেয়ারম্যান বি এম জসিমের নাম না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহের ওপর বরর্বোরচিত হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে গাছের সাথে বেঁধে ছবি তোলে চেয়ারম্যানের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দিয়ে উল্লাস করেন।

সাথে সাথে ছবিটি ভাইরাল হয় এবং সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার দিন রাতেই তার ভাই তাপস কান্তি গুহ বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন।

এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চমেক হাসপাতালে দেখতে যান জিতেন গুহকে। তিনি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি এমএ ছালাম, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হাসপাতালে জিতেনগুহকে দেখতে যান।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।