আত্মশুদ্ধির মাস রমজানের আমল ও ফজিলত

বছর ঘুরে আবার এলো মাহে রমজান। হিজরী বর্ষপঞ্জির এ নবম মাসটি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর পরম আত্মশুদ্ধির মাস। রমজান সংযম শিক্ষার মাস, মাগফিরাতের মাস, মুক্তি অর্জনের মাস। অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অবারিত ধারায় রহমত, বরকতের বৃষ্টি বর্ষণ হয় এই মাসে। এ মাসেই নাজিল হয় মানব জাতীর পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন।

পবিত্র রমজান মাসে গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় কিছু আমল রয়েছে, যা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। যেমন রোজা রাখা, তারাবির নামাজ পড়া, সেহরি করা, ইফতার করা, ইতিকাফ করা ও কদর তালাশ করা। এগুলো ছাড়াও রমজান মাসে অসংখ্য ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে।

রমজান মাসের প্রধান আমল হলো চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ২৯ বা ৩০ টি রোজা রাখা। এ মাসে রোজা রাখা মুসলিমদের ওপর আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। রোজা লৌকিকতা বিবর্জিত একটি আমল। সকল লৌকিকতা পরিহার করে রমজান মাসে সংযম ও পরহেজগারীর মাধ্যমে রোজা পালন করে তাকওয়া অর্জন করা যায়। রোজা পালনের ফজিলতও অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যে ব্যক্তি ইমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তার আগের সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। তাছাড়া রোজাদারদের জন্য আল্লাহ বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জান্নাতে প্রবেশের জন্য আল্লাহ রাইয়্যান নামক একটি বিশেষ দরজা খুলে দিবেন। যা দিয়ে রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশের সুযোগ পাবেন না।

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলো রমজানের চাঁদ দেখার রাত থেকেই তরাবির নামাজ আদায় করা। তারাবির নামাজ রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রমজানে যে ব্যক্তি তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ।

রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সেহরি। সেহরির সময় ঘুম থেকে জেগে ওঠা রোজার প্রতি আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ। সেহরি একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নাত। তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেহরিতে রয়েছে সীমাহীন বরকত। তাছাড়া মুসলমানদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া আর না খাওয়া।

রমজানের আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা। ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। অনিবার্য কারণ ছাড়া ইফতারে বিলম্ব করা কোনভাবেই উচিত নয়। খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত।

রমজানে ইফতার করা যেমন ফজিলতের, রোজাদারকে ইফতার করানোও তেমনি বরকতের। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গোনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। এক্ষেত্রে রোজাদারের সওয়াব কমে যাবেনা। রোজা রাখার পূর্ণ সওয়াবই সে পাবে।

রমজানে ইতিকাফের গুরুত্ব অত্যাধিক। রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। জাগতিক সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে ইতিকাফ পালন করা হয়। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌছে। রমজানের ২০তম দিন সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া পর্যন্ত ইতিকাফ করতে হয়।

রমজানের এ শেষ দশকেই রয়েছে কদরের রাত। যে রাতের ইবাদত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম বলা হয়েছে। রমজানের শেষ দশ দিন শবে কদর তালাশ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও সময়মত নামাজ আদায় করা, রমজানে বেশি বেশি দান-সাদকা করা, সত্য কথা বলা, কুরআন পড়া ও অন্যকে কুরআনের শিক্ষা দেওয়া, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া, বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তিগফার করা ফিতরাহ আদায় করা ছাড়াও অসংখ্য ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে এ রমজান মাসে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।