জন্ম নিবন্ধন সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গেই সনদ জালিয়াতি

ইন্টারনেট ব্রাউজারের কুকিজের মাধ্যমে থার্ডপার্টি অ্যাপস ব্যবহার করে তারা প্রবেশ করতো জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন সার্ভারে প্রবেশ করতো মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শেখ সেজান, সাগর আহমেদ জোভান, মেহেদি হাসানরা। যাদের বয়স মাত্র ২৩ বছর। এরা শুধু চট্টগ্রাম নয়, টাকার বিনিময়ে দেশের অর্ধ ডজন সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি একাধিক জেলায় সরবরাহ করতো জন্ম নিবন্ধন সনদ।
এছাড়া এই চক্র সার্ভারে প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আইডি পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করেই ভুয়া জন্মসনদ তৈরির কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় টানা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
একদিকে এমন অপরাধীদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করছে পুলিশ, অপর দিকে সার্ভার কর্তৃপক্ষ তাদের সিকিউরিটি সিস্টেমও আপডেট করেছেন। যার ফলে কোনো হ্যাকার চাইলেই আগের মতো আর সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছে না।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানা সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী খান। এসময় কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন, গণসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার স্পিনা রানী প্রামাণিক এবং পরিদর্শক সঞ্জয় সিনহা উপস্থিত ছিলেন।

উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী খান বলেন, ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া জহির ও মোস্তাকিমের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ১৬ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা মো. সাগর আহমেদ জোভানকে গ্রেফতার করে, পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নড়াইল থেকে হ্যাকার শেখ সেজান, সিরাজগঞ্জ থেকে শাকিল হোসেন ও গাজীপুর থেকে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ঢাকার কলাবাগান থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন অফিসের সরকারি সীল ও অফিসপ্যাডসহ মেহেদি হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।

জন্ম নিবন্ধন সার্ভারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গেই সনদ জালিয়াতি 1

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতির ঘটনায় ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জোভানের খোঁজ পাই। জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতিতে জড়িত অনেকগুলো চক্রের মধ্যে একটির প্রধান এই জোভান। মূলত অনলাইনে যোগাযোগের মাধ্যমে জোভান পুরো দেশে একটি চক্র গড়ে তোলে। চট্টগ্রাম, নড়াইল, ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এক একটি গ্রুপে ৩০ থেকে ৪০ জনের দল এই জালিয়াতিতে জড়িত। এসব চক্র ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকায় এসব জাল জন্ম নিবন্ধন তৈরী করে মানুষকে প্রতারিত করছে।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন বলেন, ইন্টারনেট ব্রাউজারের কুকিজের মাধ্যমে থার্ডপার্টি অ্যাপস ব্যবহার করে তারা প্রবেশ করতো জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে। গ্রেপ্তারকৃতদের তেমন কোনো ভালো আইটি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। কম্পিউটার বা স্টুডিও পরিচালনা করে। কিন্তু জাল জন্ম নিবন্ধন কাজে জড়িয়ে তারা এ বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে উঠেছে। তিনজন হ্যাকারই জাতীয় জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে অবৈধভাবে প্রবেশ করে জাল জন্ম নিবন্ধন করেছে। তাদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত ডিজিটাল আলামতও আমরা জব্দ করেছি।

তিনি আরও বলেন, জন্ম নিবন্ধনের জাতীয় সার্ভার আপডেট করা হয়েছে। এতদিন যারা জাল সনদ দিয়েছে তারা এখন আর সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছে না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।