জুমাতুল বিদা—বিদায় মাহে রমজান

আজ পবিত্র জুমাতুল বিদা। অর্থাৎ রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য ব্যাকুল থাকেন মুমিন-মুসলমানরা। দয়াময় রবের দরবারে হাজিরা দিয়ে বিগলিত চিত্তে মাগফিরাত কামনা করেন। এবারের রমজান শুরু হয়েছে জুমার দিনে। কাকতালীয়ভাবে শেষও হচ্ছে জুমা বারে। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ উদযাপন হবে বাংলাদেশে।

হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেছেন রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলীম)। তাই সারা বছরের মাঝে মুমিনের কাছে রমজান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমাতুল বিদার মাধ্যমে কার্যত রোজাকে বিদায় জানানো হয়।

মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমার দিনটি সপ্তাহিক ইবাদতের বিশেষ দিন। অনেকে এ দিনটিকে গরিবের ঈদ হিসেবে গণ্য করে। এ দিনের ফজিলত এমনিতেই বেশি। তবে রমজানের শেষ দশকে হওয়ার কারণে এ জুমার সঙ্গে শেষ দশকের ফজিলতও যোগ হয়েছে। জুমার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্যোদয় হওয়ার সবগুলো দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন। এই জুমার দিনেই হজরত আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন এবং জুমার দিনই তাকে জান্নাত দান করেন এবং জুমার দিনেই তাকে জান্নাত থেকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন এবং কেয়ামতও এই জুমার দিনেই অনুষ্ঠিত হবে।’ (মুসলিম)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।’ জুমাতুল বিদার বিশেষ তাৎপর্য এই যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র মহামতি হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুননির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদ আল-আকসা’। মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদ আল-আকসা’।

জুমার নামাজের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- হজরত সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জুমার নামাজে উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছাকাছি হয়ে দাঁড়াও। কেননা যে ব্যক্তি জুমার নামাজে সবার পেছনে উপস্থিত হবে, জান্নাতে প্রবেশ ক্ষেত্রেও সে সবার পিছনেই পড়ে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

সুতরাং জুমাতুল বিদা উপলক্ষ্যে অন্তত রমজানের শেষ জুমায় আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হয়ে এ হাদিসের ওপর আমল করে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য অর্জনের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করাও জরুরি। ইসলামি শরিয়তে জুমাতুল বিদা বলে আলাদা কোনো ফজিলতপূর্ণ দিন নেই। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিনের গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আর রমজানের কারণে কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যে কোনো ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা বেড়ে যায়।

তবে রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে এদিন ‘আল-কুদস দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। মানুষ দলে দলে জুমা আদায় করতে মসজিদের দিকে ধাবিত হবে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় যত ভুলত্রুটি হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইবেন, আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের কামনায় চোখের পানি ঝরাবেন। দোজখের আগুন থেকে বাঁচার আকুতি জানাবেন। জীবনের পথ যেন কল্যাণময় হয় তার জন্য হাত তুলবেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।