নদভীর অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত চাই—সাংসদ মোতালেব

সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের সাবেক সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজমুদ্দীন নদভী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে দুদক কর্তৃক তদন্ত চান বর্তমান সাংসদ এমএ মোতালেব সিআইপি। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কর্তৃক আইআইইউসি’র অনিয়ম ও অর্থ সম্পদ লুটপাটের তদন্ত , পরিবেশ আদালতে অর্থদন্ডে দন্ডিত নদভীর ভাইপো আ ন ম সেলিমকে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ, সরকারী জিম্মায় থাকা বালু লোপাটের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নদভীর শ্যালক রুহুল্লা চৌধুরীকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ, বনবিভাগের আড়াই হাজার একর জমি বাঁধ দিয়ে বন দখল মামলার প্রধান আসামী এরফানুল করিম চৌধুরীকে জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে অপসারন করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবী জানিয়েছেন সাংসদ মোতালেব।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ এমএ মোতালেব। এসময় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে নেতা অধ্যাপক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, সাতকানিয়া পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত আঞ্জুমান আরা বেগমসহ সাতকানিয়া লোহাগাড়ার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে এম এ মোতালেব বলেন-গত ৭ জানুয়ারী ২০২৪ একটি সুষ্ঠু,অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের মাধ্যমে আমি চট্টগ্রাম ১৫ আসনের জনগণের ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণ করি এবং শপথ গ্রহণের পরপরই এমনি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কল্যাণে করণীয় নির্ধারণ করে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষনা করি। এই ১০০ দিনের কর্মসূচিতে ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে সর্বোচ্চ সম্ভব পরিশ্রম করে অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি, বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও সরকারে কাছে ধর্ণা দিচ্ছি, বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছি। যার ফলশ্রুতিতে স্বল্প সময়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার উন্নয়ন পরিকল্পনা অনেকদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। ১০০ দিন পূর্ণ হলেই আমার প্রতিশ্রুত বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে অবহিত করব ইনশাল্লাহ্। আমার এই ১০০ দিনের কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার নিমিত্তে মাটি কাটা (টপ সয়েল) বন্ধ করা, অবৈধ গ্যাস ফিলিং স্টেশন বন্ধ করা, দখল-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস বন্ধ করা, মাদক ব্যবসায়ীদের দমন করা। আমি সাতকানিয়া লোহাগাড়ার প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তায় দীর্ঘ ১০ বছর জগদ্দল পাথরের মতে চেপে বসা দূর্বৃত্তায়ন রোধ করার নিমিত্তে অনিয়ম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি বন্ধ করতে ইতোমধ্যে অনেকটাই সমর্থ হয়েছি, এতে সাধারণ মানুষ আশ্বস্থ হয়েছে, আমি কথা রেখেছি, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি। ঠিক এই মূহূর্তে গত ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখাত সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা নদভী গত ২১ই মার্চ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে কাল্পনিক, অবান্তর ও প্রতিহিংসামূলক মিথ্যাচার করে তার বক্তব্য রেখেছেন। তার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই বক্তব্য চট্টগ্রাম ১৫ অঞ্চলের জনমনে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমি এ বক্তব্য উপস্থাপন করছি। আমি যে সব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও চোর- বাটপারদের ইতোমধ্যে দমন করেছি, তাদের পক্ষ নিয়েই জনাব নদভী উক্ত সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে আমার স্থির বিশ্বাস। কারণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি অসংলগ্ন প্রলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। জনাব আবু রেজা নদভী সাহেবের বিরুদ্ধে তার পাড়া-প্রতিবেশীরা কয়েকদিন আগে পাওনা টাকা, জমি, ইটভাটা ফেরত চেয়ে এবং একই সাথে তার দুর্নীতির বিচার চেয়ে বিশাল মানববন্ধন করেছে স্থানীয় দেওদিঘী বাজারে। যতদূর জেনেছি, সেই মানববন্ধনে স্বতষ্ফুর্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগীরা অংশগ্রহণ করেছেন। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত, নির্যাতিতদের আহাজারীতে সেদিন দেওদিঘীর বাতাস ছিলো ভারী। নদভী সাহেবের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় সাক্ষী তো ওই মানববন্ধনকারীরাই যারা তার হাতে দীর্ঘ দশ বছর নির্যাতিত, তার ভাইপোর হাতে লাঞ্চিত হয়েছিলো। নদভী সাহেবের নানা কীর্তির কথা দেশের শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও গণমাধ্যমে দফায় দফায় প্রচার হয়েছে। কে না জানে উনার অপকর্মের কথা! এখন হঠাৎ সাংবাদিক সম্মেলনে শালীনতার সীমা অতিক্রম করে তিনি শাক দিয়ে মাছ ডাকতে চেয়েছেন। তাইতো আমার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী খ্যাতিমান চিকিৎসক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য প্রফেসর ডা. আ. ম. ম মিনহাজুর রহমানকে লক্ষ্য করে মিথ্যার তীর ছুঁড়তে দেখলাম। যদিও এই তীর ইতিমধ্যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস, কারণ ডাঃ মিনহাজকে এলাকার মানুষ ভালোবাসেন, তার কথায় আস্থা রাখেন। তার দেয়া ‘বউত দিন হাইয়্যু, আর নঅ হাইয়্যু’ তোয়ার বউয়ে হাইয়্যে, শালায় হাইয়্যে, ভাইপোতে হাইয়্যে, ভাইজি হাইয়্যে, আর নঅ হাইয়্যু’ নির্বাচনের সময়ে তার বক্তৃতা ও শ্লোগান দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে থাকা প্রবাসীদের মধ্যেও গনজাগরণ সৃষ্টি করেছিলো। সে গনজাগরনে নদভী ভেসে গেছেন, এজন্যই ডা. মিনহাজের বিরুদ্ধে তার এ মনোজ্বালা, এতো ক্ষোভ। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানো যায় না। সামাজিক গণমাধ্যমে নদভী সাহেবের সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া মন্তব্য পড়লে আপনারা সহজেই অনুমান করতে পারবেন মানুষের কাছে তিনি কতোটা অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছেন।
জীবনে একদিনও আওয়ামী লীগ না করে দুইবার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন নদভী সাহেব। তারপর স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক, ভাগিনা, এপিএস’রা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া লোহাগাড়াকে। এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে। তিনি নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা ও নিষ্পাপ প্রমাণ করতে চান। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে কাল্পনিক, অবাস্তব ও প্রতিহিংসামূলক সারমর্মহীন বক্তব্য রেখে নিজেই হাসির পাত্র হয়েছেন। আমার প্রশ্ন, সাতকানিয়া লোহাগাড়ার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল বলে তিনি কি সরকারকেই আইন শৃংখলা রক্ষায় ব্যর্থ বুঝাতে চান কিনা? তার তীর আমার দিকে না কি সরকারের দিকে? তা পরিস্কার করতে হবে।

৬ খুনের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন নদভী উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদভী ৬ খুনের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন। এই গল্প অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয় ও তথ্য প্রমাণহীন। সাতকানিয়া লোহাগাড়া দুই থানার ওসি এই বক্তব্য প্রত্যাখান করে সংবাদপত্রে বলেছেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কোন রাজনৈতিক সহিংসতা নেই, ৬ মার্ডারের বিষয়টা কাল্পনিক। সাবেক এমপি’র নিজ এলাকা মাদার্শায় মাদক নিয়ে বিরোধে একজন নিহত হয়েছেন, অভিযুক্ত সকল আসামী গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন, আর কোন মার্ডার গত আড়াই মাসে হয়নি’। মূলত নদভী সাহেব কাদা ছোঁড়াছোড়ি করে নিজের অতীত ধামাচাপা দিতে চান। কিন্তু ইতোমধ্যে থলের বিড়াল তো বেড়িয়ে পড়েছে। নদভী সাহেব এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামে কয়েকজনের মালিকাধীন একটি ব্রিকফিল্ড অন্যজনের নামে নিজের প্যাড়ে লিখে দিয়ে রাতারাতি কয়েক লাখ ইট লুট করে ছিলেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্পগুলো এমনভাবে বন্টন করেছিলেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন যাতে তিনি এবং তার পরিবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে, দশ বছর আগে তার বাড়ী কুঁড়ে ঘর ছিলো, এখন প্রাসাদ হয়েছে। তার ক্ষমতার দাপটের সামনে অতীতের পিআইও ইউএনরা ছিলো অসহায়। সরকারী প্রকল্পে নয় ছয় করে, ঠিকাদারদের কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে অনিরাপাদ গ্যাস পাম্প স্থাপন, অবৈধভাবে পাহাড়ে বাঁধ দিয়ে সেচ কাজ করা, মাটি কাটা, পিকআপ গাড়ির টোকেন বাণিজ্য, ইট ভাটা মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বদলী বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য এসব কিছুর অভিযোগই তার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ করছে, তিনি তার কোন সদুত্তর এখনো দিতে পারেননি। এই সব অনাচারের প্রতিবাদ করেই জনাব ডা. মিনহাজ তার থেকে দূরে সরে এসেছিলেন। ডা. মিনহাজ একজন প্রথিতাযশা চিকিৎসক, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ, তিনি চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের অধ্যাপক। তার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করে যে বক্তব্য তিনি রেখেছেন সেসব বিষয়ে ডা. মিনহাজ আপনাদের কাছে তার অবস্থান উপস্থাপন করবেন। স্বজনপ্রীতির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন, যিনি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন, মাদকের হাট নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, যিনি কিশোর গ্যাং এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনিই যখন অন্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তখন আমরা হাসবো না কাঁদবো তা বুঝতে পারিনা।

তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করে উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছি। আমি কারোর সাথে সংঘাত চাইনা। চট্টগ্রাম-১৫ আসনকে শান্তির আবাস বানাতে চাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়েছি, তার একজন কর্মী হিসেবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলবো। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক মজবুত করে সংগঠনকে শক্তশালী করতে সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছি। জামাত-বিএনপি এখন এ এলাকায় আর হরতাল অবরোধ করার মতো ক্ষমতা রাখে না। আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তারা কোনঠাসা। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি জামাতের জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতাতো তিনিই ক্ষমতাই থাকতে করেছেন, আর এখন মায়াকান্না করছেন। আমার পরিবারের সবাই আমরা মাননীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনা মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতারাং পরিবার তুলে বিদ্রুপ করে মূলত তিনি আমার মানহানির চেষ্টা করেছেন। আমি তার এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। নদভী পিএইচডি ভুয়া কি না তা ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। নদভী সাহেব এ বিষয়ে ইউসিজির একটি প্রত্যয়ন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন। তিনি তা না করে জনগণের মনে জেগে থাকা প্রশ্নকে থামিয়ে দিতে অহেতুক রাগ দেখাচ্ছেন। হাসপাতাল করার নামে চাঁদাবাজি করেছেন বলে এমপি নির্বাচিত হবার পরে অনেকেই আমাদের অভিযোগ দিয়েছেন। আমিতো তাকে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করি নাই। এখন পাওনাদাররা পাওনা টাকা আদায়ে মানববন্ধন করছে। এটার দায় তিনি আমার ঘাড়ে তুলে দিতে পারেন না। নদভী সাহেবের প্রতিষ্ঠিত এনজিও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন এর অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় উক্ত প্রতিষ্ঠানের কিছু প্রাক্তন কর্মচারী এবং কিছু মসজিদ কমিটির সভাপতি উত্থাপন করেছেন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন তাদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে পারসেন্টেজ কেটে নেয়া হয়েছে। এই অভিযোগতো আমার নয়। আমি যদ্দুর জানি আন্তর্জাতিক জঙ্গী কানেকশনের অভিযোগে উনার উক্ত এনজিওটি কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিলো। এ বিষয়ে এ পর্যন্ত কোন বক্তব্য দিয়ে তিনি বিষয়টি পরিস্কার করেননি। সুতরাং মানুষতো যা জানে সে মতোনই মন্তব্য করবে। বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নদভী সাহেব প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘এক ভোট পেলেও এমপি হবো’। এই বক্তব্যের ভিত্তি কি ছিলো তা কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করেন নাই। তার স্ত্রী’র ছায়ায় শ্যালক রুহুল্লাহ চেয়ারম্যান গভীর নলকূপ দেয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন, বালুমহাল বাণিজ্য করতে গিয়ে কৃষকদের গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিলেন। সে অপরাধে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, জনরোষের ভয়ে এলাকায় যান না, অথচ বলা হচ্ছে তাকে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ আসতে দেয়া হচ্ছেনা। তাদের কৃতকর্মের ফলভোগ তারা করবে, অপরাধীর বিচার দেশের আইনানুযায়ী হবে, নদভী সাহেব সংবাদ সম্মেলনে দেশের প্রচলিত আইন প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বক্তব্য রেখেছেন মাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে নদভী সাহেব আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে হত্যাকান্ডের আশংকা করছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি ২০/৩০টা মার্ডারের কথা বলেছিলেন প্রকাশ্যে। তিনি উপজেলা নির্বাচনে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করছেন কিনা জানি না, তবে এ বিষয়ে প্রশাসনসহ নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সাংবাধিক ও মিডিয়া কর্মীদেরও সচেতন দৃষ্টি কামনা করছি।

নদভীর মিথ্যাচার করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নদভী সাহেব সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন তার সমর্থকরা এলাকায় যেতে পারছেন না। আমি ঘোষণা দিয়ে বলতে চাই এমন কোন অভিযোগ পেলে ওই ব্যক্তির নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব আমি নিবো। তাহার বাড়িতে যদি এমন কেউ আশ্রিত থাকে আমি তাদেরকে আজকেই আপনাদের মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি, তার আগে কারা এই দু’আড়াইশ নেতা-কর্মী , তাদের নামের তালিকা আপনাদের মাধ্যমে প্রকাশ করার দাবী জানাচ্ছি, নদভী সাহেব যেনো এ তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। আমি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। এ আড়াই মাসে নদভী, তার পরিবার বা তার কোন সামনের সারির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি, কারো উপর হামলা হয়নি। নিরপরাধী কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি তাদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেব। অনির্দিষ্ট কথার কোন গুরুত্ব নেই। কিন্তু সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম হোসাইন কবির সাহেবকে নদভী সাহেব যে ১৮ টি মিথ্যা মামলার আসামী করেছিলেন তার জন্য তিনি কোন অনুশোচনা করেননি দেখে আমি হতবাক। একই সাথে নদভী সাহেবে দশ বছরে নির্যাতিত ভুক্তভোগীর কান্নার দায়তো তাকে নিতে হবে। শুধু হোসেন কবির নয়, অসংখ্য নেতা-কর্মী তার মামলায় আসামী, একজন নিদিষ্ট আইনজীবি দিয়ে তিনি এ মামলাসমূহ করাতেন। আমি নদভী সাহেবের হাতে নিগৃহিত মিথ্যা মামলায় জর্জরিত সকল নেতাকর্মীর পাশে আগেও ছিলাম, এখনও আছি। সাতাকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠণসমূহ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ এলাকার উন্নয়ন চায়। তাই তারা আমাকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। ডা. মিনহাজ সাহেব শুধুমাত্র এই স্বার্থেই আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। আমি ডা. মিনহাজ সাহেবকে দীর্ঘ সময় ধরে চিনি, জানি। তিনি ফ্রন্ট লাইনে থেকে আমার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই নদভী সাহেব তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। আমি আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলতে চাই, নদভী সাহেব ডা. মিনহাজ সাহেবকে নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা অচিরেই প্রত্যাহার করে নিয়ে শালীনতার পরিচয় দিবেন, নইলে আপনার অনিয়ম, দূর্নীতি, লুটপাট ও যাবতীয় অপকর্মের পেন্ডারার বাক্স তথ্য উপাত্তসহ খুলে দিতে বাধ্য হবো।

নদভী অতীতে জামায়াতের রাজনীতি করতো উল্লেখ করে এমএ মোতালেব বলেন, তিনি যত্রতত্র জামায়াতের ভূত দেখছেন। এটা দেখা স্বাভাবিক, কারণ তার অতীত ও বর্তমানের সাথে জামায়াতের ছায়া প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে। তাই তার হাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দমন পীড়নের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামের আর কোন এমপি ছিলো না যার হাতে এতো বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তিনি তা অস্বীকার করতে পারবেন না। আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমি তার এহেন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ক্ষমতার দর্পে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিলেন। নদভী সাহেবের আজকে আওয়ামী লীগের মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি দেখাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের জন্য সেকি মায়াকান্না করছেন। একদিনও আওয়ামী লীগ না করে ক্ষমতার গাড়িতে চড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি যে রাজনীতি করেছেন তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। পরিবারসহ নিজে খেয়ে আওয়ামী লীগের নামে দুর্নাম রেখে গেছেন। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছেন, আলেম ওলামাদের নির্যাতন করেছেন। আর এই এসবের উপযুক্ত জবাব গত ৭ জানুয়ারী জনগণ সঠিকভাবে দিয়েছে। এখন পাগলের প্রলাপ বকে কি লাভ?
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের তিনি নিয়ে গেছেন তারা নাকি এখন তাকে সেখানে চান না। এই দোষ কি আমার বা আমাদের? যারা ট্রাস্টি বোর্ডে আছেন সকলেই সর্বমান্য। তারা অনেকে আমাকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নদভী সাহেবের দূর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বলেছেন। আমিতো এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলিনি। যতদূর জানি দুদক নদভী সাহেব ও তদীয় পত্নীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ তদন্ত করছে। কোন অনিয়ম থাকলে দুদক অবশ্যই তদন্ত করবে। সেই তদন্তের ফল দেখতে আমি উৎসাহের সাথে অপেক্ষা করছি। আমরা দেখতে চাই তার রাজনীতি তখন কোন তলানীতে ঠেকে।
আইআইইউসি’তে ট্রাস্টি হয়ে নিয়মবহিঃভূর্ত প্রক্রিয়ায় অর্থ উত্তোলন করেছেন। তার স্ত্রীকে ফিমেল ক্যাম্পাসের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিমাসে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছেন, অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে পাঁচ শতাধিক নিয়োগ দিয়েছেন নিয়ম না মেনেই, নানাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ফান্ড তশরূপ করেছেন, পাকিস্তানী নাগরিক আমিন নদভীকে ক্যাম্পাসে নিয়োগ দিয়েছেন, নাম মাত্র মূল্যে চকবাজারের জমি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, বন বিভাগের নামে নাম জারীকৃত জমি কেনার জন্য ব্যক্তিকে কোটি টাকা দিচ্ছেন, অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জমা দেয়া আর্টিকেলের প্রকৃত লেখক নাজমুল হক, নদভী এই প্রকাশনা আগেই প্রকাশ করেছিলেন, অবৈধভাবে পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে চলাফেরা করেছেন এবং ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, এতোসব অভিযোগ তো আইআইইউসি সংশ্লিষ্টরাই তুলেছেন। আমরা শুধু এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও তদন্তশেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয় ও সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
সাবেক সাংসদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। তার তথ্য প্রমাণসমূহ তার সাথে থাকা সংশ্লিষ্ট লোকজনই আমাদের দিচ্ছেন। আমার তার পুরো পরিবারের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ও বিদেশে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দুদকের তদন্ত দাবী করছি।

৩ দাবী মোতালেবের
আজকের সংবাদ সম্মেলনে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাদের মাধ্যমে আরো তিনটি দাবী উত্থাপন করতে চাই
১। সাবেক সাংসদের ভাইপো মাদার্শা ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম সেলিম’র বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে করা মামলা সমূদয় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেছেন এবং দোষ স্বীকার করে তিনি তা জমা দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। দন্ডিত অপরাধী হিসেবে তিনি এ পদে থাকতে পারেন না, চেয়ারম্যান পদ থেকে তাই তার অপসারণ দাবী করছি।
২। নদভী সাহেবের এপিএস ও জেলা পরিষদের সদস্য এরফানুল করিম আড়াই হাজার একর বনভূমি দখল করে লেক নিমার্ণের দায়ে অভিযুক্ত, বন বিভাগ শতভাগ প্রমাণসহ তাকে প্রধান আসামী করে মামলা করেছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তার লাইসেন্স করা অস্ত্রের গুলিতে স্থানীয় একজন নিরীহ নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাত হারিয়েছেন। আমরা তার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল ও জেলা পরিষদ সদস্য পদ থেকে এসব কারণে তার অপসারণ দাবী করছি।
৩। নদভী’র শ্যালক রুহুল্লাহ চৌধুরী তার জিম্মায় থাকা সরকারী জব্ধকৃত বালু বিক্রি করার দায়ে অভিযুক্ত এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত। তিনি গরীব কৃষকদের নির্বিচারে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে জমি দখল করেছিলেন, সে মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। সরকারী জিম্মার বালু চুরির দায়ে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত রুহুল্লাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করার দাবী জানাচ্ছি।

নদভী আওয়ামী লীগ নেতাকমীদের অসম্মান করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দূঃখ ভারাক্রান্ত চিত্তে বলতে চাই, বিগত দশ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে নদভী সাহেব আমাদের দলের নেতাকর্মীদের অসম্মান, অমর্যাদা করেছেন। এই জগদ্দল পাথর অপসারিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন। আমরা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আগামী পাঁচ বছর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় বিপুল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা কথা অবগত করে ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের কোন বৈষয়িক লোভ নেই। আমরা পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। সত্য ঘটনা প্রকাশে ও মিথ্যা রটনা থামাতে আমরা আপনারা সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতা কামনা করছি। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষ ভালো সময়ের প্রত্যাশায় বুক বেঁধে অপেক্ষায় ছিলো। সেই ভালো সময় এখন এসেছে। পুলিশি হয়রানী নেই, মিথ্যা মামলা নেই, দুর্নীতি নেই। একটি সুন্দরের পথে আমাদের যাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।