নিয়ন্ত্রণে এস আলমের চিনি কারখানার আগুন

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে এস আলম সুগার মিলের আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বিকেল ৪টার লাগা আগুনে রাত সাড়ে ১০টার পর নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিটের ফায়ার ফাইটাররা। সন্ধ্যার পর যুক্ত হয়েছিলেন সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।

এঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মোহাম্মদ আলম (৩০) নামে এক শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে কর্ণফুলী মইজ্জারটেক এলাকায় এস আলম সুগার মিলে এ আগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রন কক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণে তবে ফায়ার ফাইটাররা কাজ করছিলেন আগুন নেভাতে।

আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে কারখানার দায়িত্বরর্ত প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসমত জানান, আগুনে মোহাম্মদ আলম (৩০) নামে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তিনি কারখানায় কাজ করছিলেন।

এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের পাওয়ার প্লান্টের সহকারী ফিটার মনির জানান, ওই গুদামে প্রায় ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। এগুলো পুড়ে গেছে। কাছেই পরিশোধিত চিনি আছে আরও কয়েক লাখ টন।

কারখানার একজন কর্মকর্তা জানান, ফায়ার সার্ভিস গুদামের উপর থেকে পানি ছিটাতে পারছে না। পাশে কিন্তু নদী রয়েছে। পানির অভাব নেই। হেলিকপ্টারের সাহায্যে আগুন নেভানো হলে হয়তো ফিনিশড গুডের গুদাম রক্ষা করা যাবে। বৈদ্যতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করছেন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক।

রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভাগীয় কমিশনার, উন্নয়ন (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, আগুন এখনও কারখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাহিরে আগুন লাগার কোনো সম্ভবনা নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে নৌ-বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসনের অনুরোধে রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানির ১০০ জন্য সদস্য আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। এর আগে নৌবাহিনীর দুটি ও বিমানবাহিনীর একটি গাড়িতে যাওয়া সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়া কোস্টগার্ডের সদস্যরাও কারখানা সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীপথে এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছেন।

‘আগুনের তীব্রতা এখন কিছুটা কম মনে হচ্ছে। তবে আগুন প্রথমে যে গুদামে লেগেছিল, সেখান থেকে আরও ছড়িয়ে গেছে। যে গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়, সেখানে কী পরিমাণ পরিশোধিত কিংবা অপরিশোধিত চিনি ছিল, সেটার চূড়ান্ত হিসেব আমরা এখনও পাইনি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, সেখানে প্রায় এক লক্ষ মেট্রিকটন চিনি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই গুদামের সব চিনিই পুড়ে গেছে।’

কারখানা সূত্র জানায়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে পরিশোধন করা হয় দুইটি প্লান্টে। এর মধ্যে প্লান্ট ১ এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৯০০ টন, প্লান্ট ২ এর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় এ কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে।

গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে এস আলমের আরেকটি গুদামে আগুন লেগেছিল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।