প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে খুশি লংগদুর ৮৩ পরিবার

সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার মিশন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের ৮৩টি পরিবার ২ শতক জমিসহ ঘর পেলেন। বুধবার (২২ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ভূমি ও গৃহহীনদের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘর বিতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘর পাওয়া পরিবারগুলোর মাঝে দলিল তুলে দেওয়া হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা উপকারভোগীরা। অনেক ভূমিহীন ও গৃহহীন বিধবা, নিঃসন্তান ও অসহায় নারী-পুরুষ যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না আজ তারা ২ শতাংশ জমিসহ পেয়েছেন পাকা ঘর।
প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে খুশি লংগদুর ৮৩ পরিবার 1
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম, থানা তদন্ত ওসি সানজিদ আহমেদ, উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমান, শিক্ষা অফিসার এম.কে ইমাম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ সেলিম সহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ।

উপকারভোগী মুজিবুর রহমান বলেন, একটা সময় আমার জমি ছিলো, ঘরও ছিলোনা। অসুস্থ হওয়ার পর সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। তাতে ভালো হইনি, তবে কোনমতে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। একপর্যায়ে আমি সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। আজ আমার আর অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে না। ২ শতাংশ জমিসহ একটি পাকা ঘর পেয়েছি, খেয়ে থাকি আর না খেয়ে থাকি, দিন শেষে নিজের ঘরে ঘুমোতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। তাঁর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি।

৬৩ বছর বয়সী সাহেলা বেগম বলেন, স্বামী সন্তান না থাকায় বৃদ্ধ বয়সে মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবন চালাই। এক আত্মীয়র বাড়ির রাত্রিযাপন করতাম এখন আর অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে না। সরকার একটি ঘর দিয়েছে। কোনদিন ভাবিনি নিজের একটি ঘরে ঘুমোতে পারবো।

এদিকে নির্মানাধীন ঘর নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন থাকলেও তা উড়িয়ে দিয়েছেন অনেক উপকারভোগীরা। এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছেন কে ঘর করছে, কোথা থেকে ইট, বালু, খোয়া, সিমেন্ট, টিন, কাঠ আসছে আমরা জানি না। মেম্বার বাড়িতে গিয়ে খবর দিয়েছে সরকারী ঘর পেয়েছি অফিসে যেতে বলেছে। অফিসে গেলে আমাদের দলিলসহ একটি ফাইল দিয়েছে আর যার যার ঘর দেখিয়ে দিয়েছে।

রাজমিস্ত্রী নয়ন বলেন, আমি এই সরকারী ঘরের ইস্টিমেট বুঝে কাজ নিয়েছি, আমার এই সাইটে আজ পর্যন্ত কোন খারাপ মালপত্র আসেনি। এক নম্বর ইট, ভালো মানের সিমেন্ট, ইস্টিমেট অনুযায়ী রড দিয়ে কাজ করছি আমি, কাজে কোন অনিয়ম নেই। তারপরও একটু ভুল হলে যেমন রড বাঁধতে বা অন্য কোন কাজে ভুল হলে জবাবদিহিতা ছিল।

কাঠ মিস্ত্রী কবির মিয়া বলেন, এই কাজে যে টিন ধরা আছে সেই টিনই ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করি টিনের কোয়ালিটি দেখলেই বুঝি, কোয়ালিটি সম্পন্ন টিন দিয়েই কাজ হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন অনেক ঘরই আমি পরিদর্শন করেছি। সব জায়গায় সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়েছে। যে উপকরণ দিয়ে কাজ করা হয়েছে তার গুণগত মানও ভালো।

কথা হয় এই আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আতাউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, সব কাজের নির্মাণ সামগ্রী ইস্টিমেট অনুযায়ী ক্রয় করা হয়েছে, গুণগত মান ঠিক রেখে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকিব ওসমান বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এর ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে লংগদু উপজেলায় ক শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ৮৩ টি ঘর প্রদান করা হয়েছে। এই কাজে নির্দেশিত ডিজাইন মোতাবেক গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে। আমরা কমিটির সবাইকে নিয়ে তদারকি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।