বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুনীল অর্থনীতির সুফল ভোগ করবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার সম্পদ ব্যবহার করে দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, সুনীল অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে আমরা যেসব বহুমুখী উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, তার অবারিত সুফল ভোগ করবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত অস্পষ্টতা বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির আলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক টুাইব্যুনাল থেকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত অস্পষ্টতা দূরীভূত করে। আমরা অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং সফলভাবে মোকাবিলাও করেছি। এর ফলে ২০১২ ও ২০১৪ সালে, বাংলাদেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে তার সমুদ্রসীমার নিষ্পত্তি করে।

তিনি আরও বলেন, ২১ বছর বিশাল সমুদ্রসীমা নিয়ে কেউ কথা বলেনি। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা থাকলেও যারা দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কেউ সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কথা বলেনি। আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা যে রয়েছে, সেখানে আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২১টা বছর তারা সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি।

সরকাপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। আমরা পেয়েছি অপার সম্ভাবনাময় সুবিশাল একটি একান্ত অর্থনৈতিক এলাকা। সমুদ্রের সম্পদ আহরণ করে দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক ভাবে টেন্ডার দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা একটি শক্তিশালী ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তিনি যুগোস্লাাভিয়া ও ভারত থেকে পাঁচটি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন, নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খাঁন কমিশনিং করেন এবং নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন।

‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আগামীর নৌবাহিনীকে ‘স্মার্ট নৌবাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নতুন নতুন সক্ষমতা যুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডসহ সকল মেরিটাইম সংস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শিপিং করপোরেশনের জন্য নতুন জাহাজ সংগ্রহ, মেরিটাইম বিষয়ক শিক্ষার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা এবং ৪টি নতুন মেরিন একাডেমি স্থাপন করেছি।

‘জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে তাঁর দূরদৃষ্টি চিন্তার মাধ্যমে প্রণয়ন করেছিলেন প্রতিরক্ষা নীতি। আওয়ামী লীগ সরকার সেই নীতির আলোকে প্রণয়ন করে “ফোর্সেস গোল ২০৩০”।’—যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সমুদ্র আমাদের জন্য সব সময় অপার বিস্ময় এবং অমিত সম্ভাবনার জায়গা মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একইসঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তার এবং সামুদিুক সম্পদ আহরণের উৎস হিসেবে আমাদের রয়েছে বিশাল এই সামুদ্রিক অঞ্চল অন্বেষণ করার সুযোগ। এ সুযোগ নিশ্চিত হয় অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমে। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের জন্য সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছয় দফা দাবিতেই বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর উন্মেষ প্রোথিত ছিল। পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সময় অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার মাধ্যমে নৌ-যুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বীরত্বগাঁথা সৃষ্টি করেন। জাতির পিতার দূরদর্শিতা ও বর্তমান সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ জাতীয় উন্নয়নের সূচক আজ ঊর্ধ্বমুখী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এর বেশিরভাগ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব। আমাদের সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করলে ২০৪১ সালের আগেই আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ-উন্নত রাষ্টেুর কাতারে শামিল হব, ইনশাআল্লাহ। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ শিগগির জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’য় রূপান্তর হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।